ক্ষমতার নির্মম পরিণতি: ১৫ বছরের গুম-খুন, নির্যাতন ও গণতন্ত্র হত্যার দায়কার?
জনগণ যদি সচেতন না হয় এবং বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ না করে, তাহলে ভবিষ্যতেও একই চক্রের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।
বদিউল আলম লিংকন: বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গত ১৫ বছর নানা আলোচিত ঘটনা, মানবাধিকার লঙ্ঘন, গুম-খুনের অভিযোগ এবং দুর্নীতির নজির রেখে গেছে।
গণতন্ত্রের অবক্ষয়, ভোটাধিকার হরণের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখার কৌশল এবং লাখ কোটি টাকার দুর্নীতি ও লুটপাটের বিরুদ্ধে জনমনে ক্ষোভ দীর্ঘদিন ধরেই দানা বাঁধছিল।
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিশেষ করে সরকারের পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, এই দীর্ঘ শাসনকালের জন্য দায় কার?
গণহত্যা ও গুম-খুনের অভিযোগ
বিগত দেড় দশকে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের নিপীড়ন, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার বহু অভিযোগ উঠেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বিভিন্ন সময়ে দাবি করেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমন করা হয়েছে।
২০২৩ ও ২০২৪ সালে কয়েকটি বিশেষ অভিযানে বহু মানুষ নিখোঁজ হয়, যাদের অনেকের সন্ধান এখনও মেলেনি।
নির্বাচন ব্যবস্থা ও গণতন্ত্রের অবক্ষয়
সাম্প্রতিক একাধিক জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন এবং ২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়। বিরোধী দলগুলোর দাবি ছিল, এসব নির্বাচনে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরাসরি সরকারপক্ষের হয়ে কাজ করেছে।
অর্থ পাচার ও দুর্নীতি
বিশ্বব্যাংক, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে বাংলাদেশের দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় খাতে বড় অঙ্কের অর্থ পাচারের তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে এসব দুর্নীতির বিচার হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
জুলাই-অগাস্টের গণহত্যার স্মৃতি
২০২৪ সালের জুলাই-অগাস্ট মাসে সংঘটিত গণহত্যার ঘটনায় দেশ ও আন্তর্জাতিক মহলে তোলপাড় শুরু হয়। সরকারবিরোধী আন্দোলনে নামা হাজার হাজার বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার, নির্যাতন এবং হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। অনেকেই চিরতরে পঙ্গু হয়ে যান, অনেকে অন্ধ হয়ে যান বলে চিকিৎসা সূত্রে জানা গেছে।
বিদেশে বসে আন্দোলনের ডাক: জনগণের প্রতিক্রিয়া
বর্তমানে ক্ষমতাচ্যুত নেতারা বিদেশে অবস্থান নিয়ে পুনরায় আন্দোলনের ডাক দিচ্ছেন। তবে জনগণের একটি অংশ মনে করে, যারা দীর্ঘদিন দমননীতির মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রেখেছিল, তারা এখন নতুন করে কী পরিবর্তন আনবে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা এবং অনিয়মের দায় জাতি আগামি ৫০/৬০ বছর বহন করবে। গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা প্রতিটি রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জনগণ যদি সচেতন না হয় এবং বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ না করে, তাহলে ভবিষ্যতেও একই চক্রের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।
(তথ্যসূত্র: মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন, আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতামত)