বিশিষ্ট নাগরিকদের বিবৃতি: দ্বৈত নীতি ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত প্রতিবাদ

মতামত ও উপসম্পাদকীয়:

বাংলাদেশের রাজনীতি এবং সমাজব্যবস্থায় তথাকথিত ‘বিশিষ্ট নাগরিক’ নামধারী একটি শ্রেণি বহুদিন ধরেই নিজেদের নিরপেক্ষতার মোড়কে বিশেষ স্বার্থ রক্ষা করে আসছে। সম্প্রতি ২৬ জন বিশিষ্ট নাগরিক ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারির ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন, যেখানে তারা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই বিশিষ্টজনরা কি অতীতে একই রকম নৃশংসতার বিরুদ্ধে একইভাবে কণ্ঠ তুলেছিলেন?

গত এক যুগের বেশী বাংলাদেশে গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাজনৈতিক নিপীড়নের যেসব ঘটনা ঘটেছে, তখন এই ‘সচেতন’ নাগরিকরা কোথায় ছিলেন? ২০০৯ সালের পর থেকে হাজার হাজার বিরোধী দলের নেতা-কর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, গুম হয়েছেন, পঙ্গু হয়েছেন, খুন হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন শত শত মানুষ। কিন্তু তখন এই ২৬ জনের বিবৃতি কোথায় ছিল? কেন তারা শেখ হাসিনার শাসনামলে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কোনো উচ্চবাচ্য করেননি?

এই নাগরিকদের অধিকাংশই দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন সরকারের বিভিন্ন নীতি-নির্ধারণী পদে পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে সুবিধাভোগী ছিলেন। তাদের বক্তব্য, প্রতিবাদ এবং সংবেদনশীলতা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করে, জনগণের সার্বিক অধিকারের পক্ষে নয়।

এই বিবৃতি কি শুধুমাত্র অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে দেওয়া হয়েছে, নাকি এর গভীরে অন্য কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে? ২৬ নাগরিকের এই উদ্বেগ কি প্রকৃতপক্ষে একটি পক্ষকে সুবিধা দিতে করা হয়েছে?

আমরা কি ধরে নেব, তারা শেখ হাসিনার সরকার পুনরায় ক্ষমতায় আসুক, সেটাই চায়? নাকি তারা ভিন্ন কোনো আন্তর্জাতিক স্বার্থের তাবেদারি করছেন? বিবৃতির ভাষা, ব্যাখ্যা ও তীব্রতা দেখে মনে হয়, তাদের একমাত্র লক্ষ্য হলো বর্তমান শাসকদের বিপরীতে জনমত গঠন করা, কিন্তু একই ধরনের বা আরও ভয়াবহ অন্যায় যখন আওয়ামী লীগ সরকার করেছে, তখন তারা নিশ্চুপ ছিলেন।

এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো—এই ‘বিশিষ্ট নাগরিকদের’ কারা মদত দিচ্ছে? বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের প্রভাব দীর্ঘদিনের। অতীতে আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের স্বার্থরক্ষায় একাধিক চুক্তি করেছে, যা বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থের পরিপন্থী। এই ২৬ জনের অনেকেই ভারতপন্থী বলে পরিচিত। তাহলে কি তারা এই বিবৃতি দিয়ে ভারতের কোনো বিশেষ এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন?

বাংলাদেশের জনগণের কাছে এখন আর ‘বিশিষ্ট নাগরিক’ নামধারী এসব সুবিধাবাদীদের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। তাদের Selective প্রতিবাদ, পক্ষপাতদুষ্ট নিন্দা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিবৃতির আসল উদ্দেশ্য দেশের মানুষের জানা উচিত।

প্রকৃতপক্ষে, এরা জনগণের নয়, বরং নির্দিষ্ট রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক স্বার্থ গোষ্ঠীর মুখপাত্র। তাই তাদের এই বিবৃতি শুধুই একপক্ষীয় ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

(মতামত ও বক্তব‌্য প‌াঠকের নিজস্ব)।