বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ফের কূটনৈতিক উত্তেজনা
আঞ্চলিক রাজনীতিতে এর প্রভাব পড়তে পারে, বিশেষ করে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
টুইট ডেস্ক: বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন নতুন মোড় নিয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক সোশ্যাল মিডিয়া বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ঢাকার ভারতীয় ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে তলব করেছে বাংলাদেশ।
এ ঘটনায় দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক আরও এক ধাপ উত্তেজনাকর অবস্থায় পৌঁছেছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম “টাইমস অব ইন্ডিয়া”-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি ফেসবুক লাইভে বক্তব্য দেন, যা বাংলাদেশ সরকার রাষ্ট্রবিরোধী ও উসকানিমূলক বলে মনে করছে। এই বক্তব্যের পরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনে সমবেত হয়ে সরকারবিরোধী স্লোগান দেয় এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে সংঘর্ষের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে।
উল্লেখ্য যে, যদিও সংবাদটি সঠিক নয়। ৩২ নং
ফেব্রুয়ারির ৫ বা ৬ তারিখে সংঘর্ষের কোন ঘটনা ঘটেনি। সংবাদে ভুল তথ্য প্রকাশিত হয়।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জেরে ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার “পবন বাধেকে” তলব করে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
প্রতিবাদ নোটে বলা হয়েছে—
– শেখ হাসিনার বক্তব্য ‘বিদ্বেষপূর্ণ ও উসকানিমূলক’, যা দুই দেশের মধ্যে সুস্থ সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য সহায়ক নয়।
– ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনা যেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা অন্যান্য মাধ্যমে কোনো মিথ্যা বা উসকানিমূলক বক্তব্য না দেন, সে বিষয়ে ভারতকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
– পারস্পরিক বোঝাপড়া ও শ্রদ্ধার পরিবেশ বজায় রাখতে ভারত সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ভারতের প্রতিক্রিয়া-
ভারতের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তবে কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, নয়াদিল্লি বাংলাদেশের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করছে এবং বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজবে।
টাইমস অব ইন্ডিয়া-এর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ব্যাপক ছাত্র ও জনবিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং এরপর তিনি দেশত্যাগ করে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। ভারত সরকার তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিলেও তার কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানা গেছে।
দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হলেও সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো কিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে-
রাজনৈতিক সম্পর্ক: শেখ হাসিনার বক্তব্যের ফলে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রাজনৈতিকভাবে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।
সীমান্ত ও বাণিজ্য: বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তা ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের ওপর এর প্রভাব পড়তে পারে।
আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা: ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি একটি নতুন অধ্যায়। শেখ হাসিনার অবস্থান ও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে ভারত কী সিদ্ধান্ত নেয়, তা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের একজন অধ্যাপক বলেন-
“দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক থাকলেও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ক্ষমতাচ্যুত নেতৃত্বের অবস্থান কূটনৈতিক টানাপোড়েন বাড়াচ্ছে। এটি দীর্ঘমেয়াদে দুই দেশের সম্পর্কের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।”
অন্যদিকে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষক অরুণাভ বসু বলেন-
“বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারত সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তবে শেখ হাসিনার বিষয়ে নয়াদিল্লি কৌশলগত অবস্থান নেবে বলেই মনে হচ্ছে।”
এ ঘটনায় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক কোন দিকে গড়াবে, তা নির্ভর করছে পরবর্তী কূটনৈতিক আলোচনার ওপর। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন-
– ভারত সরকার যদি দ্রুত ব্যবস্থা নেয় এবং শেখ হাসিনার সোশ্যাল মিডিয়া কার্যক্রম সীমিত করে, তবে উত্তেজনা কমতে পারে।
– বাংলাদেশ সরকার যদি কঠোর অবস্থানে থাকে, তবে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক আরও খারাপ হতে পারে। তবে জনগনের প্রত্যাশা বাংলাদেশ এই বিষয়ে কঠোর অবস্থানে থাকবে।
– আঞ্চলিক রাজনীতিতে এর প্রভাব পড়তে পারে, বিশেষ করে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সাম্প্রতিক কূটনৈতিক উত্তেজনা আঞ্চলিক রাজনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থান ও তার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে নতুন উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে।
এখন দেখার বিষয়, ভারত এই পরিস্থিতিতে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানায় এবং দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক কীভাবে সামনের দিকে এগোয়।