আওয়ামী লীগ নেতাদের সম্পত্তিতে হামলা না চালানোর আহ্বান – প্রধান উপদেষ্টার

টুইট ডেস্ক: দেশের আইনশৃঙ্খলার অবনতি আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের প্রতি ভুল বার্তা পৌঁছে দিতে পারে, এমন আশঙ্কা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি গণমাধ্যমে একটি স্পষ্ট ও কঠোর বার্তা প্রদান করেন।

তাঁর প্রকাশিত বিবৃতিতে বিশেষভাবে আহ্বান করা হয়েছে, আওয়ামী লীগ নেতাদের ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের পরিবারের সম্পত্তিতে কিংবা অন্য কোনো নাগরিকের সম্পত্তিতে কোনো অজুহাতে হামলা না চালানো।

শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানোর কথা বলা হয়েছে।

ড. ইউনূস বলেন, “দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনো অবনতি হলে, তা আন্তর্জাতিক মঞ্চে আমাদের দেশের ভুল পরিচয় সৃষ্টি করবে। আমাদের অবশ্যই নাগরিক, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে।”

তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন যে, বর্তমানে কিছু গোষ্ঠী ও ব্যক্তিরা যারা বিভিন্ন কারণে ক্ষোভ প্রকাশের মাধ্যমে প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করছেন, তাঁদের ক্ষোভ বোধগম্য হলেও, এর ফলে সমাজে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি হলে তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আওয়ামী লীগ নেতাদের পরিবারের সম্পত্তিতে কোনো প্রকার হামলা বা অবৈধ কার্যক্রম চালানো হলে তা শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, বরং দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

এমন কার্যকলাপ আন্তর্জাতিক নজরে পড়লে, তা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ও মানবিক মূল্যবোধকে প্রশ্নের মুখে ফেলবে এবং দেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হবে।

ড. ইউনূস বলেন, “যারা সম্পত্তির ওপর আক্রমণ চালিয়েছেন, তাঁদের ক্ষোভ কিছুটা বোধগম্য। কারণ অনেকেই হাসিনার শাসনামলে দীর্ঘ বছর অত্যাচারের শিকার হয়েছেন। তবে এই ক্ষোভকে আইনহীন কর্মকান্ডে রূপান্তরিত করা আমাদের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়।”

তিনি আরও স্মরণ করিয়ে দেন, “নয়াদিল্লিতে অবস্থানরত সময়েও, হাসিনা সন্ত্রাসীদের সংগঠিত করে বাংলাদেশকে পুনর্গঠনের পথে বাধা সৃষ্টি করার চেষ্টা চালিয়ে যান। এই বাস্তবতা বোঝার পরও, আমাদের উচিত-সকল নাগরিককে আইনমতো আচরণে উৎসাহিত করা।”

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস নীতি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন যে, নিজেদের নিরাপত্তা ও সম্মানের নিশ্চয়তার জন্য আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখা অপরিহার্য।

নিজেরাই যদি আইন না মানেন, তবে তা শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, বরং সমাজের সমগ্র নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলবে।

ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য গঠনমূলক ও শান্তিপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

সরকার বর্তমানে সকল নাগরিকের জীবন ও সম্পত্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সচেষ্ট।

যদি কেউ দেশের অস্থিরতা সৃষ্টি বা উস্কানিমূলক কার্যকলাপে লিপ্ত হয়, তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাৎক্ষণিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বিচারের আওতায় আনা হবে।

ড. ইউনূস বলেন, “আমাদের দেশের জনগণকে আমাদের দেখাতে হবে যে, আমরা এমন একটি দেশ গড়ে তুলতে চাই যেখানে প্রতিটি নাগরিক নিরাপত্তা ও সম্মানের সঙ্গে বাস করতে পারে।”

বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে,
– ফ্যাসিবাদী নেতারা দেশের দুর্দশা ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে ফেলেছেন।
– যতদিন আমরা আইন ও নৈতিকতার প্রতি সজাগ থাকবো, ততদিন এ ধরনের নেতাদের ফিরে আসার সুযোগ কমবে।
– তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মনোযোগ সৃষ্টি করা হবে এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য তারা বিচারের আওতায় পড়বে।

ড. ইউনূস স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে, আমাদের সকলের উচিত-নিজের ও দেশের মর্যাদা রক্ষার জন্য আইনকে প্রাধান্য দেওয়া ও নাগরিক ও মানবাধিকারকে সম্মান করা।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রকাশিত বিবৃতিতে দেশের আইনশৃঙ্খলা অবনতি হলে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভুল বার্তা পৌঁছাবে, তা স্পষ্ট করে জানানো হয়েছে। তিনি আহ্বান জানান, আওয়ামী লীগ নেতাদের পরিবারসহ কোনো নাগরিকের সম্পত্তিতে কোন অজুহাতে হামলা করা উচিত নয়। নাগরিকদের, সরকারের ও নিরাপত্তা বাহিনীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আইন শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে, যাতে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ও মানবিক মূল্যবোধ বজায় থাকে এবং দেশের সম্মান বিশ্বজুড়ে প্রতিষ্ঠিত হয়।