দেশের চলমান উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে বিএনপি’র উদ্বেগপূর্ণ বিবৃতি

টুইট ডেস্ক: দেশ জুড়ে সাম্প্রতিক সময়ে যে রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অশান্তির অবস্থা দেখা যাচ্ছে, তার প্রেক্ষাপটে বিএনপি একটি বিস্তারিত বিবৃতি প্রদান করেছে।

এই বিবৃতিতে তারা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মকাণ্ডে গুরুতর অসন্তোষ প্রকাশ করে উল্লেখ করেছে যে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অনুষ্ঠিত সমাজ ও রাজনৈতিক অস্থিরতার পেছনে পতিত স্বৈরাচার ও তার দোসরদের উস্কানিমূলক আচরণ ভূমিকা রাখছে।

গত কয়েক মাস ধরে, দেশের বিভিন্ন শহরে ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান, রাজনৈতিক প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের সাথে সাথে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি, দলীয় কার্যালয় ও ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং অন্যান্য ক্ষতিকর কর্মকাণ্ডের খবর প্রকাশিত হয়েছে। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে জনমনে ক্রোধ, ক্ষোভ ও আইন নিজের হাতে নেয়ার প্রবণতা দেখা দিচ্ছে। একই সময়ে, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের নীতিমালা নিয়ে জনমত বিভক্ত হয়েছে।

বিএনপি’র বিবৃতির মূল বক্তব্য

“আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বিতাড়িত পতিত স্বৈরাচার এবং তার দোসরদের উস্কানিমূলক আচরণ”

এসব উস্কানিমূলক বক্তব্য ও কর্মকান্ডের ফলশ্রুতি হিসেবে, গত ক‌য়েক‌দিন ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পতিত স্বৈরাচারের স্মৃতি, মূর্তি, স্থাপনা ও নামফলক ভাঙে ফেলার মতো জনস্পৃহা দৃশ্যমান হয়েছে।

বিএনপি অভিযোগ করে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত ছয় মাসেও স্বৈরাচার ও তার সহদোরদের আইনের আওতায় আনার ক্ষেত্রে যথাযথ ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে।

এই অনিচ্ছাকৃত অবস্থা জনমনে এমন ধারণা তৈরি করেছে যে, আইন নিজেই জনগণের হাতে চলে গেলে দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বিএনপি দাবি করে, জুলাই আগস্টের ছাত্র গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের যথাযথ সহযোগিতা ও চিকিৎসা নিশ্চিত করার পাশাপাশি, নিন্দিত স্বৈরাচার ও তার দোসরদের দ্রত বিচার করা অত্যন্ত জরুরি।

তারা আরও উল্লেখ করে, দেশের হারানো গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য দ্রুত একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা অপরিহার্য।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাজার সিন্ডিকেটের আধিপত্য ও বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের প্রতি মিথ্যা গায়েবী মামলার অভিযোগ জনসাধারণের দুর্দশা বাড়িয়ে তুলেছে।

বিদ্যমান ফ্যাসিবাদের দোসর, বিচার বিভাগ ও পুলিশ প্রশাসনের ঐতিহ্যগত সদস্যরা এখনও কর্মরত থাকায়, সরকারের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

বিএনপি বর্তমান সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যে, শীঘ্রই অব্যাহত অশান্তি ও উগ্র গণতান্ত্রিক বিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

অন্যথায়, দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং সম্ভাব্য উগ্র নৈরাজ্যবাদী, গণতন্ত্রবিরোধী শক্তির পুনরুত্থানের আশংকা বৃদ্ধি পাবে।

বিএনপি’র বিবৃতিতে বিদ্যমান অভিযোগ ও আহ্বানসমূহ থেকে স্পষ্ট হচ্ছে, বর্তমান সরকারের অযোগ্যতা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অক্ষমতা ও জনগণের প্রতি অবহেলার বিরুদ্ধে জোরালো নিন্দা জানাচ্ছে। তারা মনে করে, দেশের শাসন ব্যবস্থা যদি নিজ হাতে আইন গ্রহণে উৎসাহিত করে, তাহলে দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোতে গভীর অস্থিরতা তৈরি হবে।

বিশ্লেষকরাও এ ব্যাপারে মন্তব্য করছেন যে, দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক সংকট ও সরকারের নীতিমালার অভাবে জনসমাজের অসন্তোষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা যদি নিয়ন্ত্রিত না করা যায় তবে দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও মানবাধিকারক্ষেত্রেও মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে।

বর্তমান দেশের উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে বিএনপি’র বিবৃতিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, স্বৈরাচার ও তার দোসরদের উস্কানিমূলক আচরণ, প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপে ব্যর্থতা ও বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের ওপর ধারিত অন্যায়-এসব মিলিয়ে একটি বিপজ্জনক রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করছে।

রাজনৈ‌তিক দলের দাবি, দ্রুত নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণে সরকারের কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করা না গেলে দেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সরকারের পক্ষ থেকে এই অবস্থার মোকাবেলা ও অশান্তি দমনে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি, নাহলে রাজনৈতিক ও সামাজিক দুর্যোগ আসন্ন হতে পারে।