সারাদেশে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি ও দলীয় কার্যালয়ে হামলা, অগ্নিসংযোগ

টুইট ডেস্ক: সারাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি, দলীয় কার্যালয় এবং শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ও স্মৃতিস্তম্ভে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে এসব হামলা সংঘটিত হয়েছে।

রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। বিক্ষোভকারীরা বাড়িটিতে ঢুকে ভাঙচুর চালায় এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। এটি ছিল বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচিহ্নসমৃদ্ধ একটি ঐতিহাসিক স্থান, যেখানে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করা হয়।

হা‌সিনা সরক‌া‌রের আমলে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়ক ফ্যাসিবাদের আঁতুড়ঘরখ্যাত হ‌য়ে উঠে।  সেই বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বাড়ির ধ্বংসাবশেষ দেখতে বৃহস্পতিবার সেখানে ঢল নামে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের। শুধু রাজধানী নয়, আশপাশের নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও গাজীপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ এসেছেন ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকতে।

চার বছরের শিশু আফিয়া থেকে শুরু করে ৭০ বছরের বৃদ্ধ, প্লে গ্রুপের ছাত্র থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী, গৃহিণী, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা- বাদ যাননি কেউই।

ঢাকার ঘটনার পরপরই দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্যদের বাড়ি ও দলীয় কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, সাবেক সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ একাধিক নেতার বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ, মাদারীপুর, পাবনা, চুয়াডাঙ্গা, চট্টগ্রাম, খুলনা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুর, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় দলীয় কার্যালয় ও আওয়ামী লীগ নেতাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে হামলার খবর পাওয়া গেছে।

বিক্ষোভকারীরা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল, ভাস্কর্য ও স্মৃতিস্তম্ভে হামলা চালিয়ে সেগুলো ধ্বংস করেছে। বিভিন্ন জেলায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ও নামফলক বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলা হয়েছে।

এই হামলাগুলো মূলত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সাধারণ মানুষের বিক্ষোভের অংশ হিসেবে ঘটেছে। বিক্ষোভকারীরা আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও রাজনৈতিক নিপীড়নের অভিযোগ তুলে ধরে এসব হামলা চালিয়েছে। বিশেষ করে গত নির্বাচনের ফলাফল ও সরকারের বিভিন্ন নীতির বিরুদ্ধে জনমনে ক্ষোভ বৃদ্ধি পেয়েছে।

সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি ও দলীয় কার্যালয়ে হামলা অব্যাহত রয়েছে। এতে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করছে, তবে বিক্ষোভকারীদের ক্ষোভ প্রশমিত হচ্ছে না।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে এবং সরকারকে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হতে পারে।

তবে সংঘর্ষ বাড়তে থাকলে এটি সামগ্রিক রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।