সৎ মন্ত্রীর সম্পদশালী পুত্র: ২১৩ কোটির রহস্য কি
টুইট ডেস্ক: সৎ রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নানের পুত্র সাদাত মান্নান-এর নামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ শনাক্ত করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি)।
দায়িত্বশীল সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, সাদাত মান্নানের নামে থাকা সম্পদের পরিমাণ প্রায় ২১৩ কোটি টাকা, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ বিদেশে অবস্থিত।
সিআইসি সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে সাদাত মান্নানের নামে বনানীতে সাতটি অ্যাপার্টমেন্টসহ কৃষি ও অকৃষি সম্পত্তি মিলিয়ে মোট ৮ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে।
তবে তার বৈদেশিক সম্পদের পরিমাণ আরও বিস্ময়কর—প্রায় ১৩২ কোটি টাকা।
সুত্রমতে, দায় বাদ দিয়ে সাদাতের মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৪০ কোটি টাকা।সম্পদের এই বিশালত্বের সঠিক উৎস ব্যাখ্যা করতে না পারায় সিআইসি সাদাতের পাশাপাশি তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধেও তদন্ত শুরু করেছে।
তদন্তের অংশ হিসেবে সিআইসি সাবেক মন্ত্রী এম এ মান্নান, তাঁর স্ত্রী জোলেখা মান্নান, মেয়ে সারা মান্নান এবং পুত্র সাদাত মান্নানের ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দিয়েছে।
সিআইসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “সোমবারই (৩ ফেব্রয়ারি) মান্নান পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সাদাতের ১৩২ কোটি টাকার বৈদেশিক সম্পদের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তিনি এর সঠিক উৎস দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এ ধরনের সম্পদ আয় হিসেবে গণ্য হবে এবং কর প্রযোজ্য হবে।”
অবৈধ সম্পদের অভিযোগ অস্বীকার করে এই বিষয়ে সাবেক মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, “আমার কোনো অবৈধ সম্পদ নেই। আমার জানা মতে, আমার সন্তানদেরও নেই।” তিনি স্বীকার করেন যে তাঁর ছেলে সাদাত মান্নানের নামে ঢাকার একটি ভবনে সাতটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। তবে তিনি জানান, “এই অ্যাপার্টমেন্টগুলো সাদাতের মামার কাছ থেকে কেনা হয়েছিল, যিনি এখন দেশের বাইরে থাকেন।”
অর্থপাচারের প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে মান্নান বলেন, “যদি এনবিআরের কাছে কোনো প্রমাণ থাকে, তারা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।”
অর্থপাচারের সন্দেহ করছেন এনবিআর । কর অঞ্চল-১৫ এর কমিশনার লুত্ফুল আজিম বলেন, “আমরা সাদাত মান্নানের ১০০ কোটি টাকার বেশি সম্পদের তথ্য পেয়েছি।”
একজন এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, “এই সম্পদ বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচারের মাধ্যমে অর্জিত হতে পারে। বনানীর মতো একটি অভিজাত এলাকায় সাতটি অ্যাপার্টমেন্ট কম দামে কেনা বাস্তবসম্মত নয়।”
উল্লেখযোগ্য যে, সাদাত মান্নান যুক্তরাজ্যের বার্কলেস ক্যাপিটাল (একটি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই লন্ডনে বসবাস করছেন।
সিআইসির তদন্ত শুরু হয় সাদাত মান্নানের আয়কর ফাইলে অসঙ্গতি লক্ষ্য করার পর। প্রথমে কর অঞ্চল-১৫ এই বিষয়ে প্রাথমিক তদন্ত করে। এরপর বিষয়টি সিআইসিতে স্থানান্তর করা হয়, যেখানে তাঁর দেশি-বিদেশি সম্পদ খতিয়ে দেখা হয়।
সিআইসির তদন্তে উঠে আসে—
– দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য।
– বিদেশে অর্থপাচারের প্রমাণ, যা বৈধ আয় উৎসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
– অফশোর অ্যাকাউন্টে বিপুল অর্থের অস্তিত্ব।
এই ঘটনায় সরকারের উচিত—
দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে সম্পদের প্রকৃত উৎস শনাক্ত করা।
অর্থপাচারের প্রমাণ পাওয়া গেলে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে বৈদেশিক সম্পদ যাচাই এবং পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া শুরু করা।
সম্পদ বিবরণী যাচাই করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক, এবং দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) একসঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া।
সাদাত মান্নানের বিপুল সম্পদের উৎস নিয়ে জনমনে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। অবৈধ অর্থপাচার এবং কর ফাঁকির মতো গুরুতর অভিযোগের সঠিক তদন্তই কেবল সত্য উন্মোচন করতে পারে।
যদি এসব অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয়, তবে তা হবে সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।