বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে ভারতের চণ্ডীগড়ে সেমিনার কেন?
টুইট ডেস্ক: ভারতের চণ্ডীগড়ের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট গভর্নমেন্ট কলেজ (পিজিজিসি), সেক্টর ১১, চণ্ডীগড়-এ শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ইনস্টিটিউট ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কমিউনিকেশন (আইডিসি) এবং পিজিজিসির যৌথ উদ্যোগে “বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিচয় এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা” শীর্ষক একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
এতে অংশ নেন ৫০ জনেরও বেশি শিক্ষাবিদ, নীতিনির্ধারক, গবেষক, এবং শিক্ষার্থী।
সেমিনারে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের অন্তর্বর্তীকালীন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ডেভিড টেইলর। তিনি বাংলাদেশের সাংবিধানিক পরিচয় একটি গণপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র থেকে একটি ইসলামি প্রজাতন্ত্রে রূপান্তরের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন।
এছাড়াও তিনি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অবনতি, উগ্র ইসলামপন্থীদের ক্রমবর্ধমান প্রভাব, এবং এর আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার উপর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
প্রফেসর টেইলর বলেন, “জুলাই ২০২৪ সালে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলন বাংলা জাতীয়তাবাদ থেকে উদ্ভূত হলেও, এটি ভবিষ্যতে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদকে প্রচারকারী বৃহত্তর রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপ নিতে পারে, যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে।”
সেশনের সভাপতিত্ব করেন পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দীপক কুমার সিং। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের গণতান্ত্রিক অবনতি, অর্থনৈতিক মন্দা, এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পেছনে থাকা বেকারত্বের মতো গভীর সামাজিক ইস্যুগুলো নিয়ে বিশ্লেষণ করেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের ভূমিকা এবং নতুন নেতৃত্বের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন।
অধ্যাপক সিং বলেন, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক পরিবর্তনের সাথে তুলনীয়। শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে একটি নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে।”
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সিনিয়র শিক্ষাবিদদের মধ্যে ছিলেন অধ্যাপক এইচ.এস. শেরগিল, অধ্যাপক বি.এস. ঘুমান, অধ্যাপক রনকি রাম প্রমুখ। সেমিনারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল আইডিসি এবং পিজিজিসি-১১ এর মধ্যে সুরক্ষা বিষয়ক গবেষণায় সহযোগিতা জোরদারের জন্য স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক (MoU)।
বাংলাদেশের বিশ্লেষকদের মতে, দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নিয়ে ভারতের মতো দেশের শিক্ষাবিদদের এমন পর্যবেক্ষণ আঞ্চলিক কূটনৈতিক স্পর্শকাতরতার দিকে ইঙ্গিত দেয়। বাংলাদেশের একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক কাঠামো রয়েছে যা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মধ্যেও স্থিতিশীলতা বজায় রেখেছে। এ ধরনের সেমিনার অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলিকে আন্তর্জাতিকীকরণের চেষ্টা হিসেবে দেখা যেতে পারে, যা বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে।
সেমিনারটি আয়োজনের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সীমানা পেরিয়ে অভ্যন্তরীণ ইস্যু নিয়ে আঞ্চলিক আলোচনা প্রসারিত হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে মতামত প্রদানের ক্ষেত্রে আরও ভারসাম্যপূর্ণ এবং নীতিনির্ভর দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন।