আধুনিকতায় এমটিবির নতুন লোগো
বদিউল আলম লিংকন: বর্তমান ব্যাংকিং খাতে ডিজিটাল রূপান্তর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হয়ে উঠেছে। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি) এই রূপান্তরে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করছে। ব্যাংকটি গ্রাহকদের সেবায় নতুন নতুন প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগ গ্রহণ করে যাচ্ছে, যা গ্রাহকদের সুবিধা বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং সেবাকে আরও সহজলভ্য করছে।
এমটিবি এখন এমন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে, যার ফলে গ্রাহকদের আর সরাসরি কোনো শাখায় যেতে হচ্ছে না। সাধারণ গ্রাহকদের জন্য রয়েছে সহজ ব্যবহারযোগ্য অ্যাপ্লিকেশন, যেখানে তারা নানাবিধ সেবা গ্রহণ করতে পারেন। করপোরেট গ্রাহকদের জন্য রয়েছে পৃথক অ্যাপ্লিকেশন, যেখানে আগামী মার্চের মধ্যে ঋণপত্রের জন্য আবেদন করা যাবে। এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর মাধ্যমে সেবার মান বৃদ্ধি করে গ্রাহকদের আরও ক্ষমতায়িত করতে চায় এমটিবি।
ঋণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে এমটিবি বেশ কিছু আর্থিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান (ফিনটেক) যেমন—আই ফার্মার, সেবা এক্সওয়াইজেডের সঙ্গে চুক্তি করেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকাভুক্ত প্রতিনিধিদের ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়াও, সাপ্লাই চেইন খাতে ঋণ প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, গ্রামীণফোনের পরিবেশকদের জন্য ২৪ ঘণ্টার টপ আপ ঋণ সুবিধা চালু করা হয়েছে। পাশাপাশি, বিকাশের টাকা ব্যবস্থাপনা সেবা এমটিবি-ই প্রথম শুরু করে, যা ব্যাংকটির উদ্ভাবনী মানসিকতার প্রমাণ।
বর্তমানে এমটিবির মোট ঋণের ৮০ শতাংশ করপোরেট খাতে, ১২-১৩ শতাংশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতে এবং ৭-৮ শতাংশ খুচরা খাতে বিতরণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এই চিত্র পরিবর্তনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ব্যাংকের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ৪০ শতাংশ ঋণ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং খুচরা খাতে এবং বাকি ৬০ শতাংশ করপোরেট খাতে বিনিয়োগ করা হবে। এতে ব্যাংকের ঝুঁকি কমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মাঝারি উদ্যোক্তা এবং মুদি ব্যবসায়ীদের জন্য ‘ডে লাইট’ নামে একটি নতুন ঋণ পণ্য চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। এই ঋণের মাধ্যমে দিনে ঋণ গ্রহণ করে সেই দিনের মধ্যেই পরিশোধ করতে হবে। এটি দ্রুত লেনদেনের জন্য বিশেষভাবে সহায়ক হবে।
এমটিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, দেশের ব্যাংকিং খাত এখন বেশ কিছু চাপে রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার চাপ আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে, ঋণ আদায়ের হার কমেছে, যা সামগ্রিকভাবে ব্যাংকিং খাতকে প্রভাবিত করছে।
তবে, এমটিবি তুলনামূলকভাবে নিরাপদ অবস্থানে আছে, কারণ আলোচিত বড় ঋণগ্রহীতা গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে ব্যাংকটির সম্পৃক্ততা কম। পুরো ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের হার ১৭ শতাংশের বেশি, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে ২৫-৩০ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। নতুন ঋণ শ্রেণীকরণের নীতিমালা আরও কঠোর করা হয়েছে, এবং ঋণের নিরাপত্তা সঞ্চিতি বৃদ্ধি করা হয়েছে।
সবকিছু মিলিয়ে বলা যায়, এমটিবি ডিজিটাল সেবা সম্প্রসারণ, নতুন ঋণ কার্যক্রম এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। যদিও সামগ্রিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে, তবুও উদ্ভাবনী উদ্যোগের মাধ্যমে ব্যাংকটি গ্রাহকসেবা এবং ব্যবসায়িক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে বলে আশা করা যায়।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি) সম্প্রতি তাদের লোগো পরিবর্তন করেছে। ব্যাংকটি ১৯৯৯ সালের ২৪ অক্টোবর যাত্রা শুরু করে এবং ইতোমধ্যে ২৫ বছর অতিক্রম করেছে। দীর্ঘ এই সময় পর ব্যাংকটি তাদের লোগোতে পরিবর্তন এনেছে। ব্যাংকটি শনিবার (১ ফেব্রয়ারি) নতুন লগোর উদ্বোধন করেন।
নতুন লোগোটি ব্যাংকের আধুনিকতা ও উদ্ভাবনী সেবার প্রতিফলন হিসেবে কাজ করবে। এটি এমটিবির ব্র্যান্ড ইমেজকে আরও শক্তিশালী করবে এবং গ্রাহকদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নতুন লোগোর উদ্বোধন উপলক্ষে ব্যাংকটি বিভিন্ন প্রচারমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এমটিবি তাদের গ্রাহকদের উন্নত সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা সম্প্রসারণসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
নতুন লোগোর মাধ্যমে এমটিবি তাদের ব্র্যান্ড পরিচিতি আরও বৃদ্ধি করতে এবং গ্রাহকদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করতে চায়।