চীনের ল্যাব থেকেই হয়তো ছড়িয়েছে কোভিড, বলছে সিআইএ
টুইট ডেস্ক: দীর্ঘ সময় ধরে করোনাভাইরাস মহামারিতে বিপর্যস্ত ছিল সারা বিশ্ব। কিন্তু কোথা থেকে এসেছিল এই মারাত্মক ছোঁয়াচে জীবাণু; আর কিসের মাধ্যমেই বা এর উৎপত্তি, এ নিয়ে প্রশ্নের অন্ত নেই।
এ নিয়ে হয়েছে তদন্তও। এতোদিন সবার সন্দেহের তীরও যেন ছিল চীনের একটি ল্যাবের দিকেই। এবার যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ) সেই একই ইঙ্গিত দিয়েছে। সংস্থাটি বলছে, চীনের উহানের গবেষণাগার থেকেই করোনাভাইরাস ছড়িয়ে থাকতে পারে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে রোববার (২৬ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
বার্তাসংস্থাটি বলছে, শনিবার নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- চীনের উহানের একটি প্রাণি বাজার থেকে প্রাকৃতিকভাবে সংক্রমণের পরিবর্তে করোনভাইরাস মহামারিটি সেখানকারই একটি গবেষণাগার থেকে দুর্ঘটনাক্রমে ছড়িয়ে পড়ে বলে যে তত্ত্ব রয়েছে, সিআইএ এখন সেটিকে সমর্থন করে।
করোনা মহামারিটির উৎস হিসাবে ল্যাব থেকে ছড়িয়ে পড়া তত্ত্বের পক্ষে সিআইএ-এর এই অবস্থান নতুন কোনও গোয়েন্দা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে নয় বরং বিদ্যমান প্রমাণের পুনর্মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করে পাওয়া গেছে বলে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন বলে নিউইয়র্ক টাইমস তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেছে।
প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় এই গোয়েন্দা সংস্থার বিশ্লেষণে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের আগে চীনের উহানের উচ্চ-নিরাপত্তা সম্পন্ন ওই ল্যাবরেটরিতে নিবিড় পরীক্ষার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
অবশ্য করোনা মহামারিটি কোনও সংক্রামিত প্রাণীর সংস্পর্শে যাওয়ার পর মানুষের মধ্যে ছড়িয়েছে কিনা বা চীনের গবেষণা ল্যাব থেকে ছড়িয়ে পড়েছিল কিনা সে বিষয়ে সিআইএ দীর্ঘকাল ধরে অনিশ্চয়তা বজায় রেখেছিল।
ট্রাম্প কতৃক নিয়োগ পাওয়া নতুন সিআইএ পরিচালক জন র্যাটক্লিফ তার এজেন্সির নতুন মূল্যায়নের ডিক্লাসিফিকেশন অনুমোদন করেছেন। র্যাটক্লিফ অবশ্য অতীতে দীর্ঘদিন ধরেই বলে এসেছেন, এই ভাইরাসটি সম্ভবত উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির একটি ল্যাব থেকে ছড়িয়ে পড়েছিল।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোর (এফবিআই) পরিচালক ক্রিস্টোফার রে দাবি করেছিলেন, প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস খুব সম্ভবত ‘চীন সরকারের নিয়ন্ত্রিত একটি ল্যাব’ থেকে ছড়িয়ে পড়ে। ২০২৩ সালের মার্চে তিনি এই দাবি করেন এবং সেসময় মূলত উহানে অবস্থিত একটি ল্যাবকেই ইঙ্গিত করেছিলেন তিনি।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রভাবশালী এই কর্মকর্তা সেসময বলেন, “এফবিআই দীর্ঘ তদন্তে জানতে পেরেছে করোনা মহামারি শুরু হয়েছিল কোনও ল্যাব থেকে। কোভিড মহামারির সূত্র ও উৎপত্তি খুঁজে বের করার প্রচেষ্টা নস্যাৎ করে দিতে চীন সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। এ বিষয়টি সবার জন্য দুর্ভাগ্যজনক।”
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে প্রথম নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। প্রথমে বলা হয়েছিল, উহান শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত হুনান সি-ফুড মার্কেট থেকেই প্রথম করোনা সংক্রমণের ঘটনা ঘটে।
দেশটির সরকারি তথ্য অনুযায়ী, করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম যে ব্যক্তি মারা যান, তার ওই মার্কেটে নিয়মিত যাতায়াত ছিল। ৬১ বছর বয়স্ক ওই ব্যক্তি যখন মারা যান, তখনও এই রোগের নাম নির্দিষ্ট করা হয়নি। চীনের সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ‘অপরিচিত ধরনের নিউমোনিয়ায়’ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তিনি।
করোনায় সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত যুক্তরাষ্ট্র প্রথম থেকেই দাবি করে আসছিল, চীন থেকে গোটা বিশ্বে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে তো একধাপ এগিয়ে গিয়ে কোভিড-১৯ কে “চীনা ভাইরাস” হিসেবে অভিহিত করেছিলেন।
যদিও, চীন বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে। দেশটির দাবি, করোনাভাইরাসের উত্স নির্দিষ্ট কোনও একটা জায়গা নয়। একাধিক উত্স থেকে কোভিড-১৯ ভাইরাস সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে।