কাগজের কৃত্রিম সংকট: ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

টুইট ডেস্ক: পাঠ্যবই ছাপানোর মৌসুমে কাগজের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দেশের কাগজ মিল মালিকরা ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে কাগজের দামের তেমন কোনো পরিবর্তন না হলেও দেশে প্রতি টন কাগজের দাম গত এক মাসে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

২০২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রয়োজনীয় ১ লাখ ১৫ হাজার টন কাগজের জন্য কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে এই অর্থ হাতানোর বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে।

২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতি টন কাগজের মূল্য ছিল ১ লাখ ৫ হাজার টাকা। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৫ থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকায়। এ কারণে দেশে ১১৬টি ছাপাখানার মধ্যে অধিকাংশই দৈনিক কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছে।

পাঠ্যবই ছাপানোর কাজে এমন সংকট শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।

ছাপাখানার মালিকরা সরকারের কাছে দ্রুত শুল্কমুক্ত কাগজ আমদানির দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, আমদানি করা কাগজ দেশীয় বাজারের তুলনায় সস্তা হবে। কাগজ সংকটের কারণে দেশের ছাপাখানাগুলোতে দৈনিক ৪০ লাখ কপি বই ছাপানোর সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

একটি সমিতির নেতা জানিয়েছেন, ৪০ কোটির বেশি বই ছাপাতে প্রয়োজন ১ লাখ ১৫ হাজার টন কাগজ, যা দেশের মাত্র ছয়-সাতটি প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করছে। তবে তারা চাহিদা মেটাতে পারছে না। আবার তৃতীয় পক্ষ থেকে কাগজ কিনতে আরও বেশি খরচ হচ্ছে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে জানা গেছে, চলতি শিক্ষাবর্ষে ৪ কোটি ৩৪ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য ৪০ কোটির বেশি বই ছাপানো হচ্ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে যথাক্রমে ৯ কোটি ১৯ লাখ ও ৩০ কোটি ৯৬ লাখ কপি বই ছাপানোর কথা। তবে ছাপার কাজে বিলম্বের কারণে বইয়ের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

কাগজ সংকটের কারণে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী এখনো সব বই হাতে পায়নি। বিশেষ করে চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। স্কুলে বই না থাকায় শিক্ষকদের ওয়েবসাইট থেকে পিডিএফ ডাউনলোড করে ক্লাস নিতে হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের স্কুলে উপস্থিতির হার কমে গেছে। কোচিং সেন্টারে ভিড় বাড়লেও আর্থিক সংকটে অনেকেই প্রাইভেট পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারছে না।

কাগজের সংকট নিরসনে সরকারকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ছাপাখানার মালিকরা দাবি করছেন, কাগজ আমদানির ওপর ৫৯ ভাগ শুল্ক আরোপ তুলে দিলে সংকট সমাধান সম্ভব। তবে আমদানি প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ।

কাগজ মিল মালিকদের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ছাপাখানার মালিকরা। আম্বার পেপার মিলস লিমিটেড ও অন্যান্য মিলের মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, কাগজের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার ষড়যন্ত্রও থাকতে পারে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্রুত শুল্কমুক্ত কাগজ আমদানি, স্থানীয় কাগজের সরবরাহ বাড়ানো, এবং কাগজের বাজারে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দেওয়া এবং শিক্ষাবর্ষের কার্যক্রম পরিচালনায় দীর্ঘস্থায়ী সংকট দেখা দিতে পারে।

বর্তমান পরিস্থিতি কেবল শিক্ষার্থীদের জন্যই নয়, পুরো শিক্ষাব্যবস্থার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। সঠিক সময়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এবং সামাজিক কাঠামোয় দেখা দেবে।