অধ্যাপক ইউনূসের দাভোস সফর: বৈশ্বিক অর্থনীতি ও আঞ্চলিক রাজনীতিতে প্রভাব

ব‌দিউল আলম লিংকন:

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ কেবল একটি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব নয়, বরং জলবায়ু পরিবর্তন, সামাজিক উদ্যোগ এবং বৈশ্বিক সহযোগিতার মতো বিষয়গুলোতে দেশের সক্রিয় অবস্থানকে তুলে ধরার একটি সুযোগ।

দাভোসে অনুষ্ঠিত এ শীর্ষ সম্মেলন বিশ্বের শীর্ষ রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক নেতাদের মেলবন্ধনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। অধ্যাপক ইউনূস সেখানে ‘জলবায়ু ও প্রকৃতির অবস্থা’ শীর্ষক অধিবেশনে বক্তব্য প্রদান করেন। তার বক্তব্য জলবায়ু সংকটের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর স্বার্থ তুলে ধরার পাশাপাশি বৈশ্বিক মনোযোগ আকর্ষণে ভূমিকা রেখেছে।

অধ্যাপক ইউনূস বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নেন, যেখানে তিনি মেটা, ডিপি ওয়ার্ল্ড, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, এবং বিশ্বব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। এ বৈঠকগুলো শুধু বাংলাদেশে সামাজিক উদ্যোগের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেনি, বরং আঞ্চলিক রাজনীতিতে বাংলাদেশের কৌশলগত গুরুত্বও জোরালোভাবে তুলে ধরেছে।

বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন ও অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের এই সময়ে, দক্ষিণ এশিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রয়েছে। অধ্যাপক ইউনূসের দাভোস সফর বাংলাদেশের জন্য কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি বাংলাদেশের আঞ্চলিক নেতৃত্বের অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করেছে। তার বৈঠকগুলো আঞ্চলিক রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

অর্থনৈতিক ও কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে, এই সফর আঞ্চলিক রাজনীতির পটভূমিতে বাংলাদেশের অবস্থানকে একটি নতুন মাত্রায় উন্নীত করেছে। এটি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশকে বৈশ্বিক মঞ্চে আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করার পথ প্রশস্ত করেছে।

অধ্যাপক ইউনূসের দাভোস সফরকে সফল বলার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে—

জলবায়ু ইস্যুতে বৈশ্বিক মনোযোগ আকর্ষণ:

‘জলবায়ু ও প্রকৃতির অবস্থা’ শীর্ষক পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকটের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর স্বার্থ তুলে ধরেছেন। এটি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশসহ ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর পক্ষে বৈশ্বিক সমর্থন বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে।

বৈশ্বিক নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ:

মেটা, ডিপি ওয়ার্ল্ড, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, এবং বিশ্বব্যাংকের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এ বৈঠকগুলো বাংলাদেশের সামাজিক ব্যবসা, উন্নয়ন প্রকল্প, এবং অর্থনৈতিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।

সামাজিক উদ্যোগকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি:

দাভোসে শোয়াব ফাউন্ডেশনের সামাজিক উদ্যোক্তাদের জন্য আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগদানের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশে সামাজিক ব্যবসার মডেলকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। এটি বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করেছে।

আঞ্চলিক রাজনীতিতে প্রভাব বৃদ্ধি:

দক্ষিণ এশিয়ায় জলবায়ু ও অর্থনৈতিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান আরও সুদৃঢ় হয়েছে। তার সক্রিয় অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভূমিকাকে আরও দৃশ্যমান করেছে।

নতুন বিনিয়োগের সম্ভাবনা:

বিভিন্ন বৈঠকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও লজিস্টিকস উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এটি ভবিষ্যতে দেশীয় ব্যবসার জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা ও বিনিয়োগের সুযোগ বাড়াতে সাহায্য করবে।

বৈশ্বিক সহযোগিতার মজবুত ভিত্তি:
আমেরিকান বিনিয়োগকারী রে ডালিও এবং জেনেল গ্রুপের চেয়ারম্যান আমের আলীরেজার সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে ভবিষ্যতের সম্ভাব্য সহযোগিতার ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে।

এ সফরের মাধ্যমে অধ্যাপক ইউনূস কেবল বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা করেননি, বরং বৈশ্বিক ইস্যুতে দেশের অবস্থানকে শক্তিশালী করেছেন।