বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড: রাশেদ চৌধুরীর বক্তব্যে

রাশেদ চৌধুরীর দাবি: গ্রেপ্তার নয়, পরিকল্পনা ছিল সামারি কোর্ট মার্শালের

টুইট ডেস্ক: ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ভয়াবহ ঘটনার বিবরণ উঠে এসেছে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ চৌধুরীর বক্তব্যে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত রাশেদ চৌধুরী এক সাক্ষাৎকারে পুরো ঘটনার পটভূমি ও বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

পরিকল্পনা, গ্রেপ্তারের পরিবর্তে হত্যাকাণ্ড

রাশেদ চৌধুরী জানান, অভিযানের আগে সেনাবাহিনীর সদস্যদের কোনো বিস্তারিত ব্রিফিং করা হয়নি। পরিকল্পনা ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সামারি কোর্ট মার্শালের মাধ্যমে বিচার করা। তবে পরিস্থিতি পাল্টে গিয়ে বাসভবনেই হত্যাকাণ্ড ঘটে।

তিনি দাবি করেন, রশিদ ও ফারুক ছিলেন এই অভিযানের মূল পরিকল্পনাকারী।

বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে গোলাগুলি

মেজর বজলুল হুদার দেওয়া বিবৃতির বরাত দিয়ে রাশেদ চৌধুরী জানান, সেনারা ভোরে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে পৌঁছায়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা। এ সময় শেখ কামাল ও তার স্ত্রী সুলতানা প্রথমে গুলি চালান। শেখ কামাল স্টেনগান নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছিলেন এবং সুলতানা একটি অটোমেটিক রাইফেল দিয়ে গুলি চালাচ্ছিলেন। এই গোলাগুলিতে একজন সিপাহী নিহত ও কয়েকজন আহত হয়। এতে সেনারা ক্ষিপ্ত হয়ে বাসার গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে।

সেনাদের পাল্টা গুলিতে শেখ কামাল নিহত হন। বজলুল হুদার ভাষ্যমতে, এরপর তারা ভেতরে ঢুকে শেখ মুজিবের ঘরের দিকে অগ্রসর হয়।

শেখ মুজিবের মৃত্যু

রাশেদ চৌধুরী বলেন, মেজর বজলুল হুদা ও মেজর মহিউদ্দীন শেখ মুজিবকে তার ঘর থেকে বের করে নিয়ে আসেন। তবে তখনও দোতলা থেকে শেখ জামাল ও সুলতানা গুলি চালাতে থাকেন। একপর্যায়ে একটি গুলি শেখ মুজিবের পেছনে থাকা এক সিপাহীর গায়ে লাগে, আর মুজিব গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে যান।

গুলাগুলির শব্দে অন্যান্য সেনারা সেখানে উপস্থিত হয় এবং পাল্টা গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু হয়।

শেখ রাসেলের করুণ পরিণতি

রাশেদ চৌধুরী জানান, শেখ রাসেলসহ পরিবারের সদস্যরা দোতলার একটি রুমে আশ্রয় নিয়েছিলেন। বজলুল হুদার বক্তব্য অনুযায়ী, সেনারা জানালা দিয়ে রুমে গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। বিস্ফোরণে সেখানে থাকা সবাই নিহত হন। শেখ রাসেলকে হত্যা করা হয় পরে, রুম থেকে বেরিয়ে আসার পর।

নতুন সরকারের ঘোষণা

সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রশিদ খন্দকার মোশতাক আহমেদকে নিয়ে রেডিও স্টেশনে যান। সেখানে তাকে নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। রেডিও স্টেশনকেই নতুন সরকারের সদর দপ্তর হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

রাশেদ চৌধুরী জানান, বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের ঘটনার পর সঠিক ফরেনসিক পরীক্ষা হলে জানা যেত হত্যার প্রকৃত কারণ-গুলি নাকি গ্রেনেড বিস্ফোরণ।

উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রাশেদ চৌধুরী বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক। তার বক্তব্যে উঠে আসা তথ্যগুলো বঙ্গবন্ধু হত্যার ঘটনা ও নেপথ্য পরিকল্পনা নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।