জিয়াউলের ৩৪২ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন: পৃথক মামলা দুদকের
জিয়াউল আহসান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ দেশের আইনি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার প্রতি গুরুতর প্রশ্ন তৈরি করে।
টুইট ডেস্ক: ৩৪২ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন এবং ৪০ কোটি ৮৭ লাখ টাকার বেশি অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (বরখাস্ত) জিয়াউল আহসান এবং তার স্ত্রী নুসরাত জাহানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে।
জিয়াউল আহসান এবং তার স্ত্রী নুসরাত জাহানের আর্থিক হিসাব অনুসারে:
অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ:
জিয়াউল আহসান: ২২.২৭ কোটি টাকা।
নুসরাত জাহান: ১৮.৫৯ কোটি টাকা।
মোট: ৪০.৮৬ কোটি টাকা।অস্বাভাবিক লেনদেন:
জিয়াউল আহসান: ১২০ কোটি টাকা।
নুসরাত জাহান: ২২২.৫০ কোটি টাকা।
মোট: ৩৪২.৫০ কোটি টাকা।সর্বমোট (অবৈধ সম্পদ ও লেনদেন):
৩৮৩.৩৬ কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এ তথ্য জানান সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন।
দুদকের দায়ের করা মামলার এজাহার অনুযায়ী, মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান তার নামে ২২ কোটি ২৭ লাখ টাকার বেশি জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সম্পদ অর্জন করেছেন। পাশাপাশি, বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন নীতিমালা লঙ্ঘন করে নিজ ব্যাংক হিসাবে ৫৫ হাজার মার্কিন ডলার জমা রাখার অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, জিয়াউল আহসান তার ৮টি সক্রিয় ব্যাংক হিসাবে প্রায় ১২০ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন করেছেন। এ কাজে তার স্ত্রী নুসরাত জাহান তাকে সহযোগিতা করেছেন এবং বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে ওই অর্থ স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তর করেছেন।
নুসরাত জাহানের বিরুদ্ধে ১৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকার বেশি জ্ঞাত আয়ের উৎসবিহীন সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তার ৪টি সক্রিয় ব্যাংক হিসাবে প্রায় ২২২ কোটি ৫০ লাখ টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন জানান, ২০২৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর দুদক তিন সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। অনুসন্ধানে তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং অর্থ পাচারের প্রমাণ পাওয়া যায়।
দুদক আইন অনুযায়ী, জিয়াউল আহসান এবং নুসরাত জাহানের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলার সূত্র অনুযায়ী, মেজর জেনারেল (বরখাস্ত) জিয়াউল আহসান তার পদমর্যাদা ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে এই সম্পদ অর্জন করেন। এই ধরনের আর্থিক লেনদেন দেশের প্রচলিত আইন এবং নৈতিকতার পরিপন্থী বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেনের সাংবাদিকদের ব্রিফিং, দুদকের দায়ের করা মামলার এজাহার ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে প্রাপ্ত অনুসন্ধান প্রতিবেদন হতে এ সকল তথ্য জানা গেছে।
জিয়াউল আহসান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ দেশের আইনি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার প্রতি গুরুতর প্রশ্ন তৈরি করে।
এ ধরনের ঘটনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের কঠোর অবস্থানের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। মামলার ন্যায্য তদন্ত ও বিচারের মাধ্যমে যদি সত্য প্রমাণিত হয়, তবে এটি দেশের দুর্নীতি প্রতিরোধ কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করবে।