কোকোর ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যু শুধুমাত্র একটি পারিবারিক ক্ষতি নয়, বরং এটি বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত। তার মৃত্যু ও এর পরবর্তী প্রেক্ষাপট আজও নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়।
বদিউল আলম লিংকন: সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।
২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি মালয়েশিয়ায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়।
তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দলীয় ও পারিবারিকভাবে তার রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান আরাফাত রহমান কোকো। তার লাশ দেশে এনে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়। তার মৃত্যুর সময় তার মা খালেদা জিয়া গুলশানে নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ ছিলেন। ছেলের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে তিনি মূর্ছা যান এবং দীর্ঘদিন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানিয়েছেন, কোকোর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিএনপি বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
আজ সকাল ১০টায় বিএনপির সিনিয়র নেতারা বনানীতে তার কবর জিয়ারত ও পুষ্পমাল্য অর্পণ করবেন। বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়া বিকালে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপস্থিতিতে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
আরাফাত রহমান কোকো ছিলেন অনেকটা রাজনীতির বাইরে। খেলাধুলা, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন। বিএনপির রাজনীতিতে বড় ভাই তারেক রহমানের তুলনায় কোকো পর্দার আড়ালে থাকতেন।
২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় খালেদা জিয়ার সঙ্গে কোকোকে সেনানিবাসের মইনুল রোডের বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। ২০০৮ সালের ১৭ জুলাই জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে যান এবং পরে মালয়েশিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সেখানেই ছিলেন।
কোকোর স্ত্রী শামিলা রহমান সিঁথি এবং দুই মেয়ে জাফিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমান বর্তমানে লন্ডনে বসবাস করছেন।
অনেকে কোকোর মৃত্যুকে অস্বাভাবিক ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে মনে করেন। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে মানসিক চাপ এবং বিদেশে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার জীবন শেষ হয়ে যায় বলে মত দেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
বিএনপি সমর্থকদের অভিযোগ, সেনাসমর্থিত সরকার এবং পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার তার পরিবারকে পরিকল্পিতভাবে রাজনৈতিক ও মানসিকভাবে হয়রানি করেছে।
তার মৃত্যুর সময়ে খালেদা জিয়া তার গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার রক্ষার আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। অনেকের মতে, কোকোর মৃত্যু তার পরিবারের ওপর একটি গভীর আঘাত এবং এর পেছনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র লুকিয়ে থাকতে পারে। বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার অপেক্ষা ।
রাজনীতির বাইরে থেকে আরাফাত রহমান কোকো দেশের ক্রীড়া খাত এবং ব্যবসায়িক উন্নয়নে অবদান রেখেছিলেন। তিনি খেলাধুলার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন এবং তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করতেন।
আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যু শুধুমাত্র একটি পারিবারিক ক্ষতি নয়, বরং এটি বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত। তার মৃত্যু ও এর পরবর্তী প্রেক্ষাপট আজও নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়। তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন তার পরিবার, দলের নেতাকর্মী এবং শুভানুধ্যায়ীরা।