এস আলম গ্রুপ ও ইসলামী ব্যাংকের রেমিট্যান্স কেলেঙ্কারি

হুন্ডি চক্র ও বেনামি ঋণের মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রা আত্মসাৎ

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থে ভয়ানক ছোবল বসিয়েছে চট্টগ্রামভিত্তিক বিতর্কিত ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলম। দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ রেমিট্যান্সে ভয়াবহ প্রতারণার তথ্য উন্মোচন হয়েছে।

বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থ হুন্ডি চক্রের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়ে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার অপব্যবহার করে বেনামি ঋণ নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক পরিদর্শন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এস আলম গ্রুপ কীভাবে হুন্ডি চক্রের মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রা সংগ্রহ করে এবং ইসলামী ব্যাংকের সহযোগিতায় বেনামি ঋণ নিয়ে সেই অর্থ পরিশোধ করত। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, দিনের শুরুতে উত্তোলিত অর্থ দিনের শেষে সাসপেন্স অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সমন্বয় করা হতো।

হুন্ডি কার্যক্রম: প্রবাসীদের কাছ থেকে বিদেশি মুদ্রা সংগ্রহ এবং তাদের পরিবারের কাছে অর্থ প্রেরণ।
বেনামি ঋণ: ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা থেকে কাগজপত্রবিহীন ঋণ উত্তোলন।
ঋণ সমন্বয়: সাসপেন্স অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে দিনের লেনদেন সমন্বয়।

কেলেঙ্কারিতে জড়িত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ফেমাস ট্রেডিং করপোরেশন, রেইনবো করপোরেশন, আনসার এন্টারপ্রাইজ, গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন, সোনালী ট্রেডার্স। ব্যক্তিগতভাবে হুবাইব উদ্দিন আহাদ (বিকাশ এজেন্ট), মানি এক্সচেঞ্জ সংশ্লিষ্ট ফিরোজ মোল্লা এবং আবুল কালাম আজাদের নাম উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এস আলম গ্রুপের অধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২০২৩ সালে প্রায় ১,৯৯০ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়। ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত এই অঙ্ক দাঁড়ায় ৩,২৪৫ কোটি টাকায়।

ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মুনিরুল মাওলা, সাবেক ডিএমডি মিফতাহ উদ্দিন এবং আকিজ উদ্দিনের নাম বেনামি ঋণের অনুমোদন ও সাসপেন্স হিসাবের অপব্যবহারে জড়িত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা জানান, “ঘটনার তদন্ত চলছে। দোষীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

“দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, ঋণ ব্যবস্থাপনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি বৃদ্ধি, সন্দেহজনক লেনদেন পর্যবেক্ষণে প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা।”

বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, রেমিট্যান্সের এই কেলেঙ্কারি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। তাই দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।

এস আলম গ্রুপের এ ধরনের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড কেবল ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রতি আস্থা ক্ষুণ্ণ করছে না, বরং প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা আরও বাড়িয়ে তুলছে।