ভারতকে বিশেষ সুবিধা শেখ হাসিনার
টুইট ডেস্ক: গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অসংখ্য চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভারতের স্বার্থরক্ষাকারী হিসেবে বিবেচিত। এসব চুক্তি নিয়ে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র সমালোচনা ও বিতর্ক রয়েছে।
উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় পর্যালোচনা করা হলো।
সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ:
২০১০ সালে শেখ হাসিনার সরকারের সময় থেকে শুরু করে ২০২৪ পর্যন্ত ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে অবৈধভাবে তিন হাজার ২৭১ কিলোমিটার কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করে।
সীমান্তের শূন্যরেখার ১৫০ গজের মধ্যে কোনো স্থাপনা নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এই নিয়ম উপেক্ষা করে বেড়া নির্মাণ করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চুক্তির শর্তে বিজিবি বাধা দিতে গেলেও ভারত চুক্তির রেফারেন্স দেখিয়ে কাজ চালিয়েছে।
ট্রানজিট সুবিধা প্রদান:
২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর ভারতকে নৌ, সড়ক ও রেলপথে ট্রানজিটের অনুমতি দেওয়া হয়।
২০১০ সালে প্রথম নৌ-ট্রানজিট চুক্তি এবং পরে আরও প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়।
চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে পণ্য পরিবহনের সুযোগ দেওয়া হয়।
সরকারের পূর্ব প্রতিশ্রুতি ছিল যে, এর ফলে বাংলাদেশ সিঙ্গাপুরের মতো উন্নত হবে। কিন্তু বাস্তবে এমন কোনো আর্থিক লাভ হয়নি।
তিস্তার পানি চুক্তি হয়নি, তবে ফেনীর পানি প্রদান:
তিস্তার পানি বণ্টনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভারত কোনো চুক্তি না করলেও ২০১৯ সালে শেখ হাসিনার সফরে ফেনী নদীর পানি ভারতের ত্রিপুরার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়।
এতে বাংলাদেশের উত্তরের কৃষি অঞ্চলগুলোতে পানির ঘাটতি দেখা দেয়।
এ চুক্তির আগে সংসদ বা মন্ত্রিসভার অনুমোদন নেওয়া হয়নি।
ভারতকে শুল্কমুক্ত সুবিধা:
২০১০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ভারতের একটি উন্মুক্ত বাজারে পরিণত হয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারতের থেকে ৯৪ শতাংশ পণ্য আমদানি করেছে।
বিপরীতে বাংলাদেশ মাত্র ৬ শতাংশ পণ্য রপ্তানি করতে পেরেছে।
বিদ্যুৎ চুক্তি: আদানি পাওয়ারের সঙ্গে অসম চুক্তি:
ভারতের আদানি পাওয়ার থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য উচ্চমূল্যের চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়।
মাসে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে বলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে।
২৫ বছরে বাংলাদেশকে ২৩.৮৭ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হবে, যা দেশের বর্তমান রিজার্ভের চেয়েও বেশি।
পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ভারতে স্থানান্তর:
২০০৯ সালে শেখ হাসিনার সরকার পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর কাজ ভারতের হাতে তুলে দেয়।
এর ফলে দেশের মুদ্রণশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
পরে অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৪ সালে এ সিদ্ধান্ত বাতিল করে।
ভারতীয়দের কর্মসংস্থান:
বাংলাদেশে লাখো ভারতীয় বৈধ-অবৈধভাবে কাজ করছে।
বাংলাদেশ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে চার কোটি ৪০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স ভারতে পাঠানো হয়েছে।
বিপরীতে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য ভারতীয় বাজারে উল্লেখযোগ্য সুযোগ তৈরি হয়নি।
প্রকাশ্য চুক্তি ও গোপন সমঝোতা:
এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের অধিকাংশই বাংলাদেশের স্বার্থ উপেক্ষা করে ভারতের জন্য সুবিধাজনকভাবে করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চুক্তিগুলোর পুনর্মূল্যায়ন এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষার দাবি জোরালোভাবে তুলতে হবে।
শেখ হাসিনার আমলে ভারতের সঙ্গে হওয়া চুক্তিগুলোর বেশিরভাগই সমালোচিত এবং জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী বলে বিবেচিত হয়েছে।
এসব চুক্তি বাংলাদেশের অর্থনীতি, কৃষি, সীমান্ত নিরাপত্তা এবং জ্বালানি খাতে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
সময় এসেছে চুক্তিগুলোর পুনর্মূল্যায়ন করে দেশের স্বার্থে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার।