পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ফ্যাসিবাদের অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া পুলিশ কর্মকর্তারা
যখন প্রশাসন নিজেদের কর্মকর্তাদের অপরাধের দায় থেকে অব্যাহতি দেয়, তখন তা জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসে মারাত্মক আঘাত হানে।
টুইট ডেস্ক: ফ্যাসিবাদের হাত ধরে এক সময় বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী তাদের পেশাদারিত্বের চূড়ান্ত সীমা পার করে। আওয়ামী সরকারের শাসনামলে একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দমনপীড়নে অংশ নেন। এদের মধ্যে কিছু পুলিশ কর্মকর্তা আজও পালিয়ে রয়েছেন, নিজের অপরাধের বিচার থেকে রক্ষা পেতে বিদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে, যার মধ্যে আগস্ট গণহত্যা, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর জানান, এসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে এবং যত শীঘ্রই সম্ভব তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। তবে সেগুলোর ফলস্বরূপ কোন বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি এবং বিষয়টি প্রশাসনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে।
এছাড়া, সংবাদসূত্র থেকে জানা যায় যে, ৫ আগস্টের পর আলোচিত ১৮৬ জন পুলিশ কর্মকর্তার চাকরি এখনও বহাল রয়েছে, যদিও তারা কর্মস্থলে উপস্থিত হননি। এদের মধ্যে ১ ডিআইজি, ৭ জন অতিরিক্ত ডিআইজি, ২ পুলিশ সুপার, ১ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ৫ জন সহকারী পুলিশ সুপার, ৫ জন পরিদর্শক, ১৪ জন উপপরিদর্শক, ৯ জন সহকারী উপপরিদর্শক, ৭ জন নায়েক এবং ১৩৫ জন কনস্টেবল রয়েছে।
বিশেষত, ডিএমপি অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ কানাডায় পালিয়েছেন, এবং ডিএমপি যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার ভারতে চলে গেছেন। এছাড়া, পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি (এসবি) মনিরুল ইসলাম ভারতে বসে উসকানিমূলক পোস্ট প্রচার করছেন। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:
– হারুন অর রশীদ – ৩৮টি মামলা
– হাবিবুর রহমান – ৩৩টি মামলা
– মনিরুল ইসলাম – ১১টি মামলা
– বিপ্লব কুমার সরকার – ২৭টি মামলা
– আতিকুল ইসলাম – গণহত্যায় উসকানির জন্য দায়ী
– ব্যারিস্টার হারুন অর রশীদ – ৫টি মামলা
এই ১২ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলো, বিশেষত আগস্ট গণহত্যার ঘটনায়, দেশের আইনের প্রতি এক গভীর অবজ্ঞা প্রকাশ করে। সরকার যদি দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতো, তবে হয়তো আরও অনেক নিরীহ জীবন বাঁচানো সম্ভব হতো।
অনুসন্ধানে এসব পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ১, ২, ৩ বা তারও বেশি মামলা রয়েছে। যে পুলিশ কর্মকর্তারা গণহত্যায় উসকানি দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, এ প্রশ্নটি আজও জনমনে রয়ে গেছে।
তাদের বেতন স্থগিত করা হলেও হাজিরা খাতায় নামের পাশে ‘অনুপস্থিত’ লেখা রয়েছে। অবশেষে, তারা পালিয়ে গেছেন এবং দেশ ছেড়ে বিদেশে আশ্রয় নিয়েছেন, যা বর্তমান প্রশাসনের জন্য এক বড় প্রশ্ন চিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ফ্যাসিবাদী পুলিশের এই দোসরদের বিরুদ্ধে সত্যি সত্যিই তদন্ত আর বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হোক ।
অপরাধের দায় যেন বাংলাদেশের জনগণ থেকে মুছে না যায়, সেটি নিশ্চিত করা জরুরি। এটি শুধু একটি পুলিশ কর্মকর্তাদের দুর্নীতি কিংবা অপরাধের ব্যাপার নয়, বরং একটি রাষ্ট্রীয়ভাবে পরিচালিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা।
যখন প্রশাসন নিজেদের কর্মকর্তাদের অপরাধের দায় থেকে অব্যাহতি দেয়, তখন তা জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসে মারাত্মক আঘাত হানে।