বেক্সিমকো ও এস আলম গ্রুপ শীর্ষ খেলাপি: ব্যাংকখাতে বিপর্যয়ের আশঙ্কা
টুইট ডেস্ক: দেশের শীর্ষ ঋণগ্রহীতা বেক্সিমকো ও এস আলম গ্রুপ এখন শীর্ষ ঋণখেলাপি। শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর এই দুই গ্রুপ ঋণ পরিশোধ বন্ধ করে দেওয়ায় দেশের অন্তত ১২টি ব্যাংক ব্যাপক সংকটে পড়েছে। এর ফলে ব্যাংকখাতের স্থিতিশীলতায় বড় ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শীর্ষ ঋণখেলাপির তালিকায় বেক্সিমকো গ্রুপ প্রথম স্থানে রয়েছে। এ গ্রুপের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২৩ হাজার ১২০ কোটি টাকা।
একই সময়ে এস আলম গ্রুপের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। শীর্ষ ১০ ঋণখেলাপির তালিকায় থাকা এই দুই গ্রুপের সম্মিলিত খেলাপি ঋণ ৩৪ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা, যা ব্যাংকখাতের মোট খেলাপি ঋণের ১২ শতাংশেরও বেশি।
বেক্সিমকো ও এস আলম গ্রুপের ঋণখেলাপির কারণে অন্তত ২০টি ব্যাংক সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষত, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জনতা ও সোনালী ব্যাংক সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে। বেক্সিমকো গ্রুপ জনতা ব্যাংকের কাছে ১৯ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা এবং সোনালী ব্যাংকের কাছে ১ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ রেখেছে।
এস আলম গ্রুপ তার নিয়ন্ত্রণাধীন চারটি বব্যাংক-ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, এবং ইউনিয়ন ব্যাংকের মাধ্যমে প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে।
এ ঋণের বড় একটি অংশ ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে জালিয়াতির মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএফআইইউ-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে-এস আলম গ্রুপ অন্তত ১০ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করেছে। একইসঙ্গে, বেক্সিমকো গ্রুপ তাদের ৩২টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বিক্রির পরিকল্পনা করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতি ব্যাংকখাতের মূলধন পর্যাপ্ততায় বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি করবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি স্ট্রেস টেস্টে উল্লেখ করা হয়েছে, শীর্ষ তিন ঋণখেলাপি গ্রুপের কারণে ব্যাংকখাতে মূলধন ঘাটতির পাশাপাশি খেলাপি ঋণের পরিমাণ অন্তত ৩ শতাংশ বাড়তে পারে।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেছেন, “বড় কর্পোরেট গ্রুপগুলো ব্যাংকখাত থেকে বিপুল ঋণ নিয়েছে, তবে তাদের সম্পদ ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত দুর্বল। বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে।”
টিআইবি-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “এস আলম ও বেক্সিমকোর খেলাপি হওয়ার পেছনে ব্যাংকগুলোর অব্যবস্থাপনা দায়ী। সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা গেলে এই ধরনের অর্থপাচার রোধ করা সম্ভব।”
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বেক্সিমকো ও এস আলম গ্রুপের বকেয়া আদায়ের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। বেক্সিমকোর ৩২টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পাশাপাশি, এস আলম গ্রুপের ঋণপত্র যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
এই খেলাপি পরিস্থিতি নিরসনে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ ও আর্থিক খাতের সংস্কারের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা জরুরি।