শহীদ জিয়াউর রহমান: স্বাধীনতার অগ্রদূত ও জাতীয়তাবাদের স্থপতি
আজ ১৯ জানুয়ারি, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী
বদিউল আলম লিংকন: আজ ১৯ জানুয়ারি, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৩৬ সালের এই দিনে বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ি গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
তার পিতা মনসুর রহমান ছিলেন কলকাতায় একটি সরকারি দপ্তরের কেমিস্ট। ভারত ভাগের পর তার পরিবার করাচিতে স্থানান্তরিত হলে, জিয়াউর রহমান সেখানেই করাচি একাডেমি স্কুলে পড়াশোনা করেন।
১৯৫৩ সালে তিনি পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৫৫ সালে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পদে কমিশন লাভ করেন।
১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে খেমকারান সেক্টরে কোম্পানি কমান্ডার হিসেবে বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য তিনি ‘হিলাল-ই-জুরাত’ খেতাবে ভূষিত হন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালিদের ওপর আক্রমণ শুরু করলে, মেজর জিয়াউর রহমান তার পাকিস্তানি অধিনায়ককে বন্দি করে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
২৭ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। মুক্তিযুদ্ধে তার বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ‘বীর উত্তম’ উপাধিতে ভূষিত করে।
মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি সেনাবাহিনীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৭৫ সালের ২৫ আগস্ট সেনাপ্রধান নিযুক্ত হন। ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হন এবং ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে তিনি নিহত হন। তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়ে থাকে। তার মৃত্যুতে জাতি হারিয়েছে এক সাহসী নেতা। আজও তিনি স্বাধীনতা ও জাতীয়তাবাদের প্রতীক হয়ে আছেন।
আজ ১৯ জানুয়ারি তার জন্মবার্ষিকীতে জাতি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে তাকে স্মরণ করছে।
বিএনপি ও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন দিনটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। তার অবদান ও স্মৃতি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জীবন ও কর্ম নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। বিশেষ করে, ১৯৮১ সালের ৩০ মে তার হত্যাকাণ্ডের পর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
বিবিসি বাংলা তার হত্যাকাণ্ডের পরবর্তী ঘটনাবলী নিয়ে একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে তার মৃত্যুর পরের এক সপ্তাহের ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরা হয়েছে।
জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রপতিত্বকালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে তার ভূমিকা আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত হয়েছে। তিনি বাণিজ্য উদারীকরণ এবং বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করেন।
তার শাসনামলে বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রপ্তানি শুরু করে, যা বৈদেশিক রেমিট্যান্সের প্রধান উৎসে পরিণত হয় এবং গ্রামীণ অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে।
এছাড়া, তার সময়েই বাংলাদেশ মাল্টি-ফাইবার চুক্তির সুবিধা গ্রহণ করে তৈরি পোশাক রপ্তানি শুরু করে, যা বর্তমানে দেশের মোট রপ্তানির ৮৪%।
জিয়াউর রহমানের সামরিক ও রাজনৈতিক জীবন, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধে তার ভূমিকা এবং স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়টি আন্তর্জাতিক গবেষক ও সাংবাদিকদের আগ্রহের বিষয় হয়ে উঠেছে।
তার জীবন ও কর্ম নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও গবেষণা ও বিশ্লেষণের প্রয়োজন রয়েছে।