মানবতাবিরোধী আদালতে দণ্ডিতদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সুপারিশ
টুইট ডেস্ক: মানবতাবিরোধী আদালতে দণ্ডিত ব্যক্তিদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করেছে ড. বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে গঠিত কমিশন।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার কাছে ১৬টি ক্ষেত্রে মোট ১৫০টি সুপারিশ সংবলিত প্রতিবেদন জমা দেয় কমিশন।
প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর সংসদ ভবনে অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “গুম, খুন, অর্থ পাচার এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের রাজনীতি থেকে দূরে রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলের সদস্যদের তালিকা বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যেখানে সদস্যদের অনুদানে দল পরিচালিত হবে এবং গোপন ভোটে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন, “লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র এবং শিক্ষক রাজনীতি বন্ধেরও সুপারিশ করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় নারীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতির প্রস্তাব করা হয়েছে।”
কমিশনের সুপারিশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হলো:
– ‘না’ ভোটের বিধান চালু: নির্বাচনে প্রার্থী পছন্দ না হলে ভোটারদের ‘না’ ভোট দেওয়ার সুযোগ।
– দলীয় প্রতীক বাদ: স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাদ দেওয়ার প্রস্তাব।
– প্রধানমন্ত্রী পদের সীমা: কেউ যেন দু’বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে না পারেন।
– সংরক্ষিত নারী আসন: সংসদে নারীদের জন্য ১০০টি আসন সংরক্ষণের প্রস্তাব।
– অবৈধ কার্যক্রমে জড়িত এমপি প্রত্যাহার: বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়ালে সংসদ সদস্যদের নির্ধারিত পদ্ধতিতে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই প্রত্যাহার করার বিধান।
– নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতায়ন: কমিশনের আইনি, আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা আরও শক্তিশালী করার সুপারিশ।
– ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) বাতিল: ইভিএম ব্যবহারের বিধান বাতিল।
– মনোনয়ন শর্ত: প্রার্থী হতে হলে ৫ বছরের আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক।
– স্বতন্ত্র প্রার্থিতা: স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার জন্য ৫০০ ভোটারের লিখিত সমর্থন।
– প্রবাসীদের ভোটাধিকার: প্রবাসীদের জন্য পোস্টাল ও অনলাইন ভোটিং ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব।
স্থানীয় সরকার ও বিশেষ প্রস্তাব
– স্থায়ী স্থানীয় সরকার কমিশন গঠন।
– নির্বাচিত এমপি এবং সরকারি কর্মকর্তাদের বিশেষ সুবিধা হ্রাস।
– পার্বত্য চট্টগ্রামে নির্বাচিত জেলা পরিষদ গঠনের প্রস্তাব।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের আত্মত্যাগ বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না। তাদের রক্তের ঋণ শোধ করতে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচনী ব্যবস্থা গড়ে তোলার বিকল্প নেই।”
কমিশনের এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।