সাবেক ৫০ নারী এমপি, তারকা ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে এনবিআর

টুইট ডেস্ক: জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নতুন গঠিত আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট (টিআইআইইউ) কর ফাঁকি এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের সন্দেহে ৩০০-এর বেশি ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। এই তালিকায় সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, পুলিশ, বিচারক, শিল্পী, সাংবাদিক, সাবেক আইনপ্রণেতা এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম রয়েছে।

সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, পুলিশ, বিচারক, শিল্পী, সাংবাদিক, সাবেক আইনপ্রণেতা এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তি

এনবিআরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই তদন্তে ১২তম জাতীয় সংসদের ৫০ জন সাবেক নারী এমপি সহ প্রায় ১০০ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং পুলিশ ক্যাডার কর্মকর্তার নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এসব ব্যক্তি ২০১৮ ও ২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের সাথে যুক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে।

তদন্তের আওতায় রয়েছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী শমী কায়সার এবং ক্রীড়াজগতের তারকা শাকিব আল হাসান, যার পরিবারের সদস্যদের বিপুল পরিমাণ আয়ের উৎসের সঙ্গতি পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি, কাস্টমস ও কর ব্যবস্থায় দুর্নীতির অভিযোগে এনবিআরের কিছু কর্মকর্তা এবং অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তারাও তদন্তের আওতায় আছেন।

টিআইআইইউ বিদেশে, বিশেষত কানাডা ও দুবাইতে, সম্পদ অনুসন্ধান করছে। দুইটি কোম্পানি এবং বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কর সংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে। এনবিআর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত বছর একটি বড় কর জালিয়াতি উদ্ঘাটন করা হয়েছে, যেখানে একটি প্রতিষ্ঠান জালিয়াতির কথা স্বীকার করে কিছু অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে।

এছাড়াও, এনবিআরের আয়কর গোয়েন্দা ইউনিট প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যাপক কর ফাঁকি এবং অর্থপাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে, বিশেষ করে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে।

ইউনিটের কমিশনার আবদুর রকিব জানিয়েছেন, “আমাদের লক্ষ্য আর্থিক অনিয়ম প্রকাশ করা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। অনিয়মের শাস্তি এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না এবং সরকার কর পুনরুদ্ধারে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।”

এনবিআরের গোয়েন্দা ইউনিট বিশেষভাবে ব্যাংক লেনদেনের তথ্য এবং বিভিন্ন সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সংগৃহীত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তদন্ত করছে। এ ছাড়া, বিদেশি লেনদেন, আমদানি-রপ্তানি সম্পর্কিত তথ্য এবং গোপনে বিনিয়োগ করা ব্যক্তিদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

এনবিআরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী দুই মাসে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আশা করা হচ্ছে এবং কিছু কর ফাঁকিবাজ এবং অবৈধ সম্পদধারীদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রমাণ পাওয়া যাবে।

ইউনিটের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসব তদন্তে অনেক ব্যক্তির লেনদেনের সাথে অন্যান্য অনেক ব্যক্তির নামও উঠে আসতে পারে, ফলে তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

অবৈধ সম্পদ শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ নিয়ে সাবেক এনবিআর সদস্য সৈয়দ মো. আমিনুল করিম বলেন, “অবৈধ সম্পদ এক থেকে দুই বছর পর্যন্ত লুকানো সম্ভব, কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে তা গোপন রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।”

সাবেক সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের পরিচালকও জানান, “অবৈধ লেনদেনে সবসময় একটি ফুটপ্রিন্ট থাকে এবং যথাযথভাবে তদন্ত করলে ব্যক্তিগত এবং প্রতিষ্ঠানগত জালিয়াতি ও অবৈধ আয় উদঘাটন করা সম্ভব।”

এভাবে, এনবিআর এই বড় ধরনের তদন্তের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত রয়েছে।

#এনবিআর #অবৈধসম্পদ #করফাঁকি #শমীকায়সার #সাকিবআলহাসান #আইন #অর্থনীতি #বাংলাদেশ