টিউলিপের পর যুক্তরাজ্যে আলোচনায় সালমানপুত্র শায়ান

টুইট ডেস্ক : দুর্নীতির অভিযোগে যুক্তরাজ্য জুড়ে শেখ হাসিনার ভাগ্নি ও ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিককে ঘিরে চলছে তোলপাড়। এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ছেলে শায়ান ফজলুর রহমান।

ব্রিটিশ রাজার পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত একটি দাতব্য সংস্থার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সালমানপুত্র শায়ান। এই দাতব্য সংস্থায় আড়াই লাখ পাউন্ড দান করেছিলেন তিনি।

শায়ানকে ঘিরে শেখ পরিবারের নানাবিধ সুবিধা নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা।

সালমান এফ রহমান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) গত আগস্ট মাসেই সালমান, তার ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান এবং পুত্রবধূ শাজরেহ রহমানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে।

শনিবার যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বাংলাদেশের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান ব্রিটিশ মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের ‘পারিবারিক বন্ধু’।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, টিউলিপের খালা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লন্ডন সফরের সময় শায়ানের ১৩ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের বাড়িতে ‘বিনা ভাড়ায়’ অবস্থান করতেন।

এছাড়া, টিউলিপের মা শেখ রেহানা লন্ডনের গোল্ডার্স গ্রিনে যে বাড়িতে বিনাভাড়ায় থাকেন, সেটিও শায়ান রহমানের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি অফশোর কোম্পানির মালিকানায়।

ডেইলি মেইল আরও জানিয়েছে, দারিদ্র দূরীকরণের লক্ষ্যে ২০০৭ সালে ব্রিটিশ রাজা চার্লসের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় দাতব্য সংস্থা ‘ব্রিটিশ এশিয়ান ট্রাস্ট’। শায়ান রহমান বর্তমানে এই সংস্থার উপদেষ্টা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

একসময় তিনি তাদের পারিবারিক ব্যবসা বেক্সিমকো গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ছিলেন। তবে, ব্রিটিশ এশিয়ান ট্রাস্টের ওয়েবসাইটে এখনও তার পরিচয় বেক্সিমকো গ্রুপের সিইও হিসেবে উল্লেখ করা রয়েছে।

শায়ানের প্রশংসা করে বাকিংহাম প্যালেসের এক নৈশভোজে রাজা চার্লস বলেছিলেন, ‘আমাদের সঙ্গে যারা কাজ করে, আমরা তাদের মতই ভালো। তাই আমি আনন্দিত যে, শায়ান রহমান বাংলাদেশে আমাদের নতুন প্রকল্পটি দেখভাল করার পাশাপাশি তাতে সহযোগিতা করবেন।’

ডেইলি মেইল লিখেছে, দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরও ব্রিটিশ এশিয়ান ট্রাস্টের চেয়ারম্যান পদে বহাল আছেন শায়ান।

এ বিষয়ে এক বিবৃতিতে ব্রিটিশ এশিয়ান ট্রাস্ট বলেছে, ‘আমরা শায়ানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে অবগত। আমরা বাংলাদেশের ঘটনাপ্রবাহের দিকে নজর রাখছি।’

অভিযোগের বিষয়ে শায়ানের এক মুখপাত্রের বক্তব্যও তুলে ধরেছে ডেইলি মেইল। মুখপাত্র বলেন, ‘শায়ান রহমানের জন্ম যুক্তরাজ্যে। তিনি একজন ব্রিটিশ নাগরিক এবং আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী। তিনি কিংবা তার স্ত্রী কখনো কোনো অপরাধে অভিযুক্ত হননি। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে অন্য ৩০০ জনের সঙ্গে কেবল বাংলাদেশেই তাদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এটা পুরোপুরি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পদক্ষেপ।’

ব্রিটিশ এশিয়ান ট্রাস্টে আড়াই লাখ পাউন্ড অনুদান রয়েছে শায়ানের। সম্প্রতি সানডে টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকার বাংলাদেশের অর্থপাচার নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সেই অনুদানের প্রসঙ্গ তোলেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসও। শায়ানের ‘দানশীলতা’ নিয়ে তিনি রসিকতাও করেন।

শায়ান এক সময় আইএফআইসি ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠনে তিনি পরিচালক পদও হারান।