বাংলাদেশে নতুন এইচএমপি ভাইরাস শনাক্ত: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সতর্কতা জারি

টুইট ডেস্কঃ বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) শনাক্ত হয়েছে। রাজধানীর একটি হাসপাতালে এক ব্যক্তির শরীরে এ ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পরই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সারাদেশে সতর্কতা জারি করেছে। চীনসহ উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশেও এর সংক্রমণ রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, রোববার (১২ জানুয়ারি) দেশে একজনের শরীরে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) শনাক্ত হয়েছে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান ডা. আহমেদ নওশের আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

কী এই এইচএমপি ভাইরাস?

হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) হলো এক ধরনের শ্বাসতন্ত্রের সংক্রামক ভাইরাস। এটি সাধারণ সর্দি-কাশি থেকে শুরু করে গুরুতর শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাইরাসটি হাঁচি, কাশি, আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ বা স্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়।

২০০১ সালে চীনে প্রথম এ ভাইরাস শনাক্ত হয়। বর্তমানে ভাইরাসটি চীন, জাপান, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

কাদের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ?

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, নিম্নোক্ত ব্যক্তিদের জন্য ভাইরাসটি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ:

১. ১৪ বছরের কম বয়সী শিশু

২. ৬৫ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তি

৩. দীর্ঘমেয়াদী শ্বাসতন্ত্রের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি (যেমন হাঁপানি বা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ)

৪. গর্ভবতী নারী

৫. দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি

এইচএমপিভি সংক্রমণের লক্ষণ:

জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, দুর্বলতা, বুকে ব্যথা

বিশ্বে এইচএমপিভির বর্তমান পরিস্থিতি:

চীনে জানুয়ারির শুরুতে নতুন করে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর জাপান, মালয়েশিয়া ও ভারতেও ভাইরাসটি শনাক্ত হয়। ভাইরাসটি নিয়ে এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। তবে সচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ভাইরাস প্রতিরোধে এখনও কোনো কার্যকর ভ্যাকসিন বা নির্দিষ্ট ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। আক্রান্তদের চিকিৎসায় প্রচলিত ওষুধ ব্যবহার করেই সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে।

ভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা:

১. শীতকালীন শ্বাসতন্ত্রের রোগ থেকে সুরক্ষার জন্য মাস্ক ব্যবহার করুন।
২. হাঁচি-কাশির সময় টিস্যু বা গামছা দিয়ে মুখ ঢাকুন।
৩. ব্যবহৃত টিস্যু সঠিক স্থানে ফেলে দিন এবং সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন।
৪. আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন এবং অন্তত তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন।
৫. অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক বা মুখ স্পর্শ করবেন না।
৬. জ্বর, কাশি বা শ্বাসকষ্ট থাকলে বাড়িতে অবস্থান করুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

চিকিৎসকদের পরামর্শ:

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এইচএমপিভি প্রতিরোধে করোনা প্রতিরোধে অনুসৃত পদ্ধতিগুলোর সঙ্গে সাদৃশ্য রয়েছে। নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, মাস্ক ব্যবহার করা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মাধ্যমে এই ভাইরাস থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব।

সতর্ক থাকুন, সচেতন থাকুন

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা মেনে চলুন এবং নিজের পরিবার ও আশেপাশের মানুষকে সচেতন করুন। সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিলে নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করুন।