দুর্নীতিবাজ ও গণহত্যার আসামিরা পালাচ্ছেন: একটি উদ্বেগজনক চিত্র
টুইট ডেস্ক: বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের পর থেকে একাধিক দুর্নীতিবাজ এবং গণহত্যার আসামির পালানোর ঘটনাগুলো দিনদিন বেড়ে চলেছে।
তারা নানা কৌশল অবলম্বন করে দেশ ছেড়ে অন্য দেশে আশ্রয় নিচ্ছেন, বিশেষ করে ভারত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে। এই ঘটনাগুলোর মধ্যে বেশ কিছু রোমাঞ্চকর পালানোর কাহিনী উঠে এসেছে যা একদিকে যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি সরকারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন তুলছে।
অভ্যুত্থানের পর থেকে রাজনৈতিক নেতাদের পালানোর ঘটনাটি নতুন নয়। শুরুতেই পালিয়ে গেছেন সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা, যেমন হাসিনার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, গোয়েবলস মন্ত্রী হাছান মাহমুদ, এবং বিভিন্ন এমপি ও মন্ত্রী।
এদের অনেকেই বর্তমানে ভারতের মেঘালয়, ত্রিপুরা, আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, নয়াদিল্লি, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন।
এদের মধ্যে অন্যতম হলো আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, যিনি ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে যান। তার বিরুদ্ধে ৩৯ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা রয়েছে এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ৭২৫ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে।
একইভাবে, হাসিনার সরকারের অনেক এমপি, যেমন ইকবালুর রহিম, শামীম ওসমান, নজরুল ইসলাম বাবু এবং অন্যান্য নেতারা ধীরে ধীরে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছেন।
পালানোর ক্ষেত্রে কিছু নেতা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছেন। যদিও তাদের কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে, তবে অধিকাংশই সাধারণ পাসপোর্ট ব্যবহার করে দেশত্যাগ করছেন।
ভারত ও বাংলাদেশী দালালচক্রের সহায়তায় তারা সীমান্ত অতিক্রম করছেন। তবে সীমান্ত পথে পলায়ন কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে, বিশেষত বিজিবির সক্রিয়তার কারণে। বর্তমানে বেশ কিছু নেতা নৌপথ ব্যবহার করে পালানোর চেষ্টা করছেন। তারা টেকনাফের শাহ পরীর দ্বীপ থেকে সমুদ্রপথে পশ্চিমবঙ্গের মৎস্যবন্দরগুলোতে পৌঁছাচ্ছেন।
এতো কিছুর পরেও সরকারের পক্ষ থেকে পালিয়ে যাওয়া নেতাদের ধরা নিয়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের অনুসরণ করছে।
এছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে, একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে এই বিষয়ে সরকার কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও, যথেষ্ট না হওয়া এবং সীমান্ত চোরাচালানের মাধ্যমে পালিয়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের উদ্যোগ কিছুটা ব্যর্থ হয়েছে।
দুর্নীতিবাজদের পালানোর ঘটনা দেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি করেছে। সরকারের বিরুদ্ধে নানা প্রশ্ন উঠছে, বিশেষত পলায়নরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে।
দেশের বিচার ব্যবস্থা এবং দুর্নীতি দমন কমিশনও চেষ্টা করছে, তবে সবসময় সফল হতে পারছে না। এর ফলে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে এবং সামাজিক অসন্তোষ সৃষ্টি হতে পারে।
পালিয়ে যাওয়া নেতাদের তালিকা এবং তাদের ‘রোমাঞ্চকর’ পালানোর গল্প শুধু দেশের জনগণের জন্য উদ্বেগজনক নয়, এটি দেশের আইন ও শৃঙ্খলা ব্যবস্থাও প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।
যদিও সরকার তাদের ধরা এবং দেশে ফেরানোর জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, কিন্তু পালানোর কৌশলগুলোর ধীরগতির কারণে এটি এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সূত্র: এই প্রতিবেদনে উল্লিখিত তথ্য এবং ঘটনা বিভিন্ন স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টের ভিত্তিতে সাজানো হয়েছে।