আট বছর পর ফিরে এলেন নিখোঁজ আরমান: টিউলিপের সঙ্গে বিতর্কিত ঘটনাপ্রবাহ

টুইট ডেস্ক: ২০১৬ সালে গুম হন ব্যারিস্টার মীর আহমেদ বিন কাসেম, যিনি আরমান নামেও পরিচিত। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিচারাধীন জামায়াত নেতা মীর কাসিমের ছেলে আরমান তখন তার পিতার আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। নিখোঁজ থাকার দীর্ঘ আট বছর পর, শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট তিনি মুক্ত হয়ে বাড়ি ফেরেন। রুগ্ন চেহারার কারণে তাকে চেনা যাচ্ছিল না, যেখানে গুম হওয়ার আগে তিনি ছিলেন সুস্থ-সবল।

২০১৭ সালে ব্রিটিশ সাংবাদিকরা আরমানের বিষয়ে শেখ হাসিনার ভাগ্নি ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। চ্যানেল-৪ এর একজন সাংবাদিক টিউলিপকে মনে করিয়ে দেন, একটি ফোনকল আরমানের মুক্তিতে ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু তার প্রশ্নে টিউলিপ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান। তিনি জানতে চান, আরমান কি তার সংসদীয় এলাকার বাসিন্দা বা ব্রিটিশ নাগরিক? সাংবাদিকের উত্তরে, আরমান বাংলাদেশি এবং তার পরিবার টিউলিপের কাছে সাহায্য চেয়েছে-এ কথা জানানো হলে টিউলিপ আরো উত্তেজিত হয়ে বলেন, তিনি ব্রিটিশ এমপি এবং বাংলাদেশি রাজনীতির সঙ্গে তার সরাসরি সম্পর্ক নেই।

সাংবাদিকের যুক্তি ছিল, টিউলিপ নিজেই বলেছেন যে তিনি আওয়ামী লীগের মুখপাত্র এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি। কিন্তু টিউলিপ এই মন্তব্যে আরও ক্ষুব্ধ হয়ে সাংবাদিককে বাংলাদেশি রাজনীতির প্রসঙ্গে তাকে না টানার বিষয়ে সতর্ক করেন।

চ্যানেল-৪ এর প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, তাদের প্রশ্নোত্তরের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আরমানের বাড়িতে র‌্যাব সদস্যরা গিয়ে তার স্ত্রীকে চুপ থাকতে বলেন এবং তার বিদেশি যোগাযোগ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। আরমান বলেন, এই ঘটনা তার নিখোঁজ হওয়ার প্রসঙ্গটি শেখ হাসিনা পরিবারের জন্য স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছিল বলেই ঘটে।

ব্রিটিশ আইনজীবী মাইকেল পলক অভিযোগ করেন, আরমানের স্ত্রীর ওপর যে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছিল, তা চ্যানেল-৪ এর প্রতিবেদনের প্রচার ঠেকানোর উদ্দেশ্যেই। তিনি বলেন, “একজন ব্রিটিশ এমপির সঙ্গে আলাপের পরই যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হুমকি দেয়, তখন বিষয়টি গভীর উদ্বেগের।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমস এই প্রসঙ্গে টিউলিপ এবং লেবার পার্টির মন্তব্য চাইলে তারা কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে টিউলিপের একজন সহকারী জানান, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ফরেন অফিসে একটি পত্র পাঠানো হয়েছিল, যাতে আরমানের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল।

ব্যারিস্টার মীর আহমেদ বিন কাসেমের আট বছরের নিখোঁজ থাকার পর ফিরে আসা এবং এই সময়ের ঘটনাগুলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর ইঙ্গিত বহন করে।