৯৫ জন জেলের বিনিময়ে ৯০ বাংলাদেশি জেলেকে ফেরত দিচ্ছে ভারত

টুইট ডেস্ক: ভারত ও বাংলাদেশে আটক উভয় দেশের জেলেদের পারস্পরিক প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া গতকাল শনিবার (৪ জানুয়ারি) চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। উভয় দেশের কর্তৃপক্ষ আইনগত প্রক্রিয়া শেষ করে বন্দীদের মুক্তি দিয়েছে। ভারতীয় কোস্ট গার্ডের একটি সূত্র জানিয়েছে, ৯৫ জন ভারতীয় এবং ৯০ জন বাংলাদেশি জেলে একে অপরের দেশ থেকে আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক সীমানা রেখার দিকে রওনা দিয়েছেন। আর রোববার দুপুরে তাঁদের নিজ নিজ দেশের প্রতিনিধিদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রটি টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়াকে বলেছে, ‘আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক সীমানা রেখার কাছে হস্তান্তর ও গ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভারতীয় উপকূলে পৌঁছাতে প্রায় ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা সময় লাগবে। আশা করি, ভারতীয় জেলেরা ৬ জানুয়ারি সকালে এখানে পৌঁছাবেন।’

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জেলেদের সাগর দ্বীপে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের স্বাগত জানাবেন। মমতা সাগর মেলার প্রস্তুতি তদারক করতে দ্বীপটি পরিদর্শন করবেন। ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের দীর্ঘদিনের বন্দিত্ব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন, ব্যক্তিগতভাবে তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।’

কাকদ্বীপের তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক মন্তুরাম পাখিরাও মমতার জেলেদের সঙ্গে সাক্ষাতের সম্ভাবনা নিশ্চিত করেছেন।

গত অক্টোবরে বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলায় চারটি ট্রলারে থাকা ৬৪ জন ভারতীয় জেলে গ্রেপ্তার হন। পরে পটুয়াখালী জেলায় আরও দুটি ট্রলারে থাকা ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাংলাদেশে তাঁরা কয়েক মাস বন্দী থাকার পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের একাধিক মৎস্যজীবী সংগঠন অভিযোগ করে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নতুন সরকার অপ্রয়োজনীয়ভাবে কঠোর হয়েছে।

সুন্দরবন সামুদ্রিক মৎস্যজীবী শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক সতীনাথ পাত্র বলেন, আগে বাংলাদেশের উপকূল প্রশাসন আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক সীমানা ভুলবশত অতিক্রম করা জেলেদের ফিরিয়ে দিত এবার অপ্রয়োজনীয়ভাবে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশি আদালতে বন্দীদের মুক্তির জন্য মৎস্যজীবীদের সংগঠন একাধিক আইনি পদক্ষেপ নিলেও তা সফল হয়নি। গত ২ ডিসেম্বর বিধানসভায় দেওয়া এক বক্তব্যে মমতা দুঃখ প্রকাশ করেন যে তাঁর সরকার প্রতিবেশী দেশে জেলেদের পরিবারকে আইনি সহায়তা প্রদানে সহযোগিতা করলেও কেন্দ্র এ বিষয়ে বিশেষ কিছু করেনি।

জেলেদের সংগঠন যখন বন্দীদের মুক্তি নিশ্চিত করার চেষ্টা করছিল, তখন ভারতীয় কোস্ট গার্ড ওডিশার পারাদ্বীপের কাছে ভারতীয় জলসীমায় প্রবেশ করা ৭৮ জন বাংলাদেশি জেলেকে গ্রেপ্তার করে। একটি সূত্র বলেছে, আরও প্রায় ১২ জন বাংলাদেশি জেলে আগে গ্রেপ্তার হয়েছিল আমাদের হেফাজতে প্রায় ৯০ জন বাংলাদেশি থাকায় আমাদের জেলেদের মুক্তির জন্য দর-কষাকষি শুরু করা সহজ হয়েছিল।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, অবশেষে, উভয় সরকার সামুদ্রিক সীমানা রেখায় বিনিময় প্রক্রিয়া চালু করার জন্য একমত হয়।

ভারতীয় জেলেদের মুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হয় গত ২৬ ডিসেম্বর। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিব আটক ৯৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ঘোষণার মধ্যে দিয়ে এই প্রক্রিয়ার সূচনা হয়। পরে ভারত সরকারও ৯০ জন বাংলাদেশি জেলের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করে। অবশেষে, দুই দেশের সিনিয়র কর্মকর্তারা ৫ জানুয়ারি যৌথ প্রত্যাবাসন বাস্তবায়নের জন্য সম্মত হন।