লুট হওয়া অ’স্ত্রগুলো এখন কোথায়?

টুইট ডেস্ক: ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের প্রায় ৪৬০টি থানায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এছাড়া ১১৪টি ফাঁড়িতেও একই ঘটনা ঘটায় দুর্বৃত্তরা। লুটপাটের সময় সরকারি গুরুত্বপূর্ণ নথির পাশাপাশি লুট করা হয় সরকারি অস্ত্র। এসব অস্ত্র লুট করে কেউ কেউ নিজের কাছে রেখেছে আবার কেউ সেগুলো বিক্রি করে দিয়েছে। হাতবদল হয়ে এখন সেগুলো ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা চরমপন্থি, উগ্রপন্থি, দাগি আসামি, সন্ত্রাসী, জেল পলাতক আসামি, কিশোর গ্যাংসহ বিভিন্ন অপরাধীদের হাতে।

এদিকে এই লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশের তেমন তৎপরতা নেই। সফলতাও কম। পুলিশ এখনো সুনির্দিষ্টভাবে বলতেও পারছে না ঠিক কাদের হাতে অস্ত্রগুলো আছে। ইতিমধ্যে এসব অস্ত্র দিয়ে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যমতে, ৫ই আগস্টের পর দেশের বিভিন্ন থানা ও ফাঁড়ি থেকে মোট ৫ হাজার ৭৫০টি বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র লুট হয়েছিল। এরমধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে ৪ হাজার ৩৫১টি অস্ত্র। এই হিসাবে এখন অস্ত্র উদ্ধার হয়নি ১ হাজার ৫৯৯টি। এছাড়া একই সময়ে গোলাবারুদ লুট হয়েছিল ৬ লাখ ৫১ হাজার ৬০৯টি। উদ্ধার হয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৪৩৯টি। গোলাবারুদ উদ্ধার হয়নি ২ লাখ ৬২ হাজার ১৭০টি।

পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, লুট হওয়া অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে, এসএমজি, এলএমজি, বিভিন্ন ধরনের রাইফেল, পিস্তল, শটগান, গ্যাসগান। এ ছাড়াও রয়েছে কাঁদানে গ্যাস লঞ্চার, কাঁদানে গ্যাসের শেল, কাঁদানে গ্যাসের স্প্রে, সাউন্ড গ্রেনেড, বিভিন্ন বোরের গুলি।

র‌্যাব সদরর দপ্তরের সূত্রমতে, ৫ই আগস্টের পর থেকে র‌্যাব ২৬শে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪৮৪টি অস্ত্র উদ্ধার করেছে। এরমধ্যে র‌্যাবের লুট হওয়া ১৬৮টি অস্ত্রের মধ্যে ৯০টি, পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্রের মধ্যে ২২৮টি উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া ১৬৬টা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। আর গোলাবারুদের ক্ষেত্রে র‌্যাবের ৭ হাজার ৩০৩ রাউন্ড, পুলিশের ১১ হাজার ৯৪১ রাউন্ড উদ্ধার করা হয়েছে। আর অবৈধ গোলাবারুদ ১ হাজার ২৮০ রাউন্ড উদ্ধার করা হয়েছে। অস্ত্র উদ্ধার সংক্রান্ত মামলায় ৯৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

এছাড়া গণভবনে ও সংসদ ভবনে দায়িত্বে থাকা এসএসএফ সদস্যদের বিশেষায়িত অস্ত্র ও বিভিন্ন সরঞ্জামাদি এখনো উদ্ধার হয়নি। এসবের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ট্যাক্টিক্যাল গিয়ার, অস্ত্র, গোলাবারুদ, সাজসরঞ্জাম, বেতার যোগাযোগ ও অপারেশনাল সরঞ্জামাদির মজুত ছিল।

জানা গেছে, লুট হওয়া অস্ত্রের মধ্যে অত্যাধুনিক অ্যাসল্ট রাইফেল, স্নাইপার রাইফেল, ফ্ল্যাশব্যাং গ্রেনেড, অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেম, বেতার যোগাযোগের ডিভাইস ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদসহ ৩২টি ভারী অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি।

তবে এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু তৎপরতা দেখা গেলেও সফলতা নেই তেমন। তবে পুলিশ বলছে তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, অচিরেই এইসব অস্ত্র উদ্ধান করা সম্ভব হবে।

৫ই আগস্টের পর লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম বলেন, এসব অস্ত্র তো অপরাধীদের কাছে চলেই গেছে। সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এসব অস্ত্র উদ্ধারে এখনো নতুন কোনো পদ্ধতি উদ্‌ঘাটন করতে পারিনি যেটা দিয়ে অস্ত্র উদ্ধার করে ফেলতে পারবো।

৫ই আগস্টের পর লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম বলেন, এসব অস্ত্র তো অপরাধীদের কাছে চলেই গেছে। সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এসব অস্ত্র উদ্ধারে এখনো নতুন কোনো পদ্ধতি উদ্‌ঘাটন করতে পারিনি যেটা দিয়ে অস্ত্র উদ্ধার করে ফেলতে পারবো।

এদিকে অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে দেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) মুনীরুজ্জামান বলেন, যেসব অস্ত্র লুট হয়েছে তার মধ্যে পুলিশের অস্ত্র ছাড়াও এসএসএফ’র কিছু বিশেষায়িত অস্ত্র ছিল সেগুলোও তারা এখনো খুঁজে পায়নি। কাজেই এগুলো আমাদের নিরাপত্তার জন্য বড় ঝুঁকি থাকবে। আর যতদিন পর্যন্ত সেগুলো উদ্ধার করা না যাবে সেই ঝুঁকি থেকে যাবে।

তিনি আরও বলেন, অস্ত্র উদ্ধারের জন্য নতুন কোনো পদ্ধতি বের করতে হবে। ক্রিয়েটিভ এবং ইনোভেটিভ আইডিয়া ব্যবহার করতে হবে। গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করতে হবে। তাহলে উদ্ধারের প্রচেষ্টা আরও জোরদার হবে।