মঈন উ আহমেদের সাক্ষাৎকারে বিডিআর হ’ত্যাকাণ্ডের নতুন তথ্য
টুইট ডেস্ক: আলোচিত বিডিআর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য কাহিনি আজও অনুদ্ঘাটিত রয়ে গেছে। কীভাবে কার স্বার্থে এবং কার মদদে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানী ঢাকার পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে নির্মম ও নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল, তা এতদিন শুধুমাত্র ক্ষমতাসীনদের মুখে একতরফা বয়ান হিসেবে উচ্চারিত হয়েছে।
এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে এবার মুখ খুলেছেন সে সময়ের সেনাপ্রধান জেনারেল মঈন উ আহমেদ। ২৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সকাল) ফ্লোরিডা থেকে টেলিফোনে নিউইয়র্কের একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি সরকারের তদন্ত কমিশন গঠনের ব্যাপারে সন্তোষ প্রকাশ করেন। মঈন বলেন, “জাতির প্রত্যাশা পূরণে গঠিত কমিশনের তদন্তে প্রকৃত তথ্য উদ্ঘাটিত হবে। কারণ ওই হত্যাকাণ্ডের ভিকটিমরা ছিলেন দেশের চৌকস সেনা কর্মকর্তারা। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে ধ্বংসের অভিপ্রায়ে ওই হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছিল।”
উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তী সরকার বিডিআর হত্যাকাণ্ডের তদন্তে একটি কমিশন গঠন করে। সে কমিশনের প্রথম বৈঠক শেষে কমিশনের প্রধান এ এল এম ফজলুর রহমান গত বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে জানিয়েছিলেন, “হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র থাকলে, তা চিহ্নিত করে জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে।”
এদিকে, বিডিআর হত্যাকাণ্ড নিয়ে মঈন উ আহমেদ ‘পিলখানায় পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড’ শিরোনামে একটি বই লিখেছেন, যা শিগগিরই প্রকাশিত হবে। সেখানে অন্তর্ভুক্ত অনেক তথ্য থাকবে, যা এখনও অজানা।
মঈন উ আহমেদ বলেন, “চিকিৎসার জন্য ফ্লোরিডায় অবস্থান করছি। নানা কুসংবাদ ও বিতর্কিত কথাবার্তা শুনে আমি ব্যথিত হয়েছি। আমি বিডিআর হত্যাকাণ্ড নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে কিছু বলতে চেয়েছিলাম।” মঈন আরও জানান, তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত কমিশনের সাবেক প্রধানের সঙ্গে ইতোমধ্যে যোগাযোগ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, “২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের (যিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার) সঙ্গে ৮১ মিলিমিটার মর্টারের বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। তিনি তখনও বিদ্রোহের বিষয়টি জানতেন না। পরে পরিস্থিতির ভয়াবহতা উপলব্ধি করে সেনাবাহিনী ‘অপারেশন রিস্টোর অর্ডার’ নামে একটি অভিযান শুরু করে, যার নেতৃত্ব দেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাকিম।”
সাবেক সেনাপ্রধান জানান, “তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্রিগেড পাঠানো হয়। এই ৪৬ ব্রিগেড ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাকিমের নেতৃত্বে ১০ কর্মকর্তা ও ৬৫৫ সৈনিক নিয়ে পিলখানায় যান।”
মঈন উ আহমেদ বলেন, “ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী পৌঁছানোর আগে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হয়। বিদ্রোহীরা তখন আত্মসমর্পণের আগ্রহ দেখায়নি এবং হত্যাকা- চালিয়ে গেছে।”
তৎকালীন সরকার এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর ‘সাধারণ ক্ষমা’ ঘোষণা করে বিদ্রোহীদের আত্মসমর্পণ করার অনুমতি দেয়। তবে মঈন উ আহমেদ বলেন, “আমি সরকারকে বলেছিলাম, সাধারণ ক্ষমা দেওয়ার কোনো প্রশ্নই উঠে না। কারণ প্রাণহানি ঘটে গেছে এবং ৫৭ জন কর্মকর্তা মারা গেছেন। বিদ্রোহীরা যদি আত্মসমর্পণ করতেই চায়, তবে তাদের অবশ্যই অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করতে হবে এবং সকল অফিসারদের নিরাপদে মুক্তি দিতে হবে।”
মঈন উ আহমেদ জানান, “বিকেল ৩টা ৪৮ মিনিটে একজন বিদ্রোহী দলের নেতৃত্বদানকারী তৌহিদ যমুনায় আলোচনা করতে আসেন। তবে পরে তার অবস্থান সম্পর্কে কোনো খবর পাওয়া যায়নি। বিদ্রোহীরা আত্মসমর্পণের আগে বিক্ষিপ্ত হামলা চালিয়ে চলছিল।”
তিনি আরও বলেন, “আটটি পরিবারের মধ্যে তিনটি ছিল সেনা কর্মকর্তাদের এবং বাকিগুলো ছিল ডিএডি কর্মকর্তাদের পরিবারের। বিদ্রোহীরা ২৬ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় যমুনা থেকে পিলখানার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। তবে তারা ঘোষণা করে, সাধারণ ক্ষমার প্রজ্ঞাপন হাতে না আসা পর্যন্ত তারা আত্মসমর্পণ করবে না।”
বিডিআর বিদ্রোহ অবসানের দিকে এগিয়ে গেলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সামরিক বাহিনীর ওপর আক্রমণের প্রস্তুতি নিতে বলেন। মঈন উ আহমেদ বলেন, “ট্যাংক আনার অনুমতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করি এবং রাত ৩টার মধ্যে সামরিক অভিযান শুরু হয়।”
অবশেষে ৩৩ ঘণ্টার দীর্ঘ বিদ্রোহের পর বিদ্রোহীরা আত্মসমর্পণ করে এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে পিলখানা থেকে বিদ্রোহী কর্মকাণ্ডের সমাপ্তি ঘটে। এই হত্যাকাণ্ডে প্রাণ হারান ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা। সূত্র: ইত্তেফাক
মঈন উ আহমেদের বক্তব্য, নতুন বই এবং তদন্ত কমিশনের কার্যক্রম বিডিআর হত্যাকাণ্ডের আলোচিত ও বিতর্কিত অধ্যায়ের অনেক বিষয়কে আরও স্পষ্ট করবে বলে আশা করা হচ্ছে। সূত্র: ইত্তেফাক