অর্থপাচার ও দুর্নীতির ফাইলপত্র নষ্ট করতেই সচিবালয়ে আগুন: রিজভী
টুইট ডেস্ক: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সচিবালয়ে আগুন গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। পতিত শেখ হাসিনার মুখ্য সচিবের অর্থ পাচারের ফাইলসহ অর্থ পাচার এবং দুর্নীতির ফাইলপত্র নষ্ট করতেই সচিবালয়ে আগুন দেওয়া হয়েছে।
শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় রংপুরের মিঠাপুকুরের আটপুনিয়া গ্রামের সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি।
এর আগে তিনি সচিবালয়ে আগুন নেভাতে গিয়ে নিহত ফায়ার ফাইটার শোয়ানুর জামান নয়নের বাড়িতে গিয়ে বিএনপি পরিবারের পক্ষ থেকে খোঁজ খবর নেন।
এ সময় ‘আমরা বিএনপি পরিবারের’ আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুম্মন, সদস্য সচিব মাকসিদুল মোমেনিন মিঠুন, রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
রুহুল কবির রেজভী বলেন, ‘সচিবালয়ে আগুন গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ, নিঃসন্দেহে এটা চক্রান্তের অংশ। পতিত শেখ হাসিনার একজন প্রধান আমলা, মুখ্যসচিব প্রচুর টাকা পাচার করেছেন। তার সেই অর্থ প্রাচারের ফাইলগুলো ছিল পুড়ে যাওয়া ফাইলগুলোর মধ্যে।অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি পুড়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘অর্থ পাচারের শুধুমাত্র একটা ঘটনা উঠে এসেছে। আরও কত ঘটনা আছে। এসব ঘটনাকে ধামাচাপা দিতেই সচিবালয়ের নবম তলায় আগুন দেওয়া হয়েছে। যেখানে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ছিল।’
রিজভী বলেন, ‘আমার বক্তব্য হচ্ছে, দেশে পরাজিত স্বৈরাচারের অনেক দোসরেরা রয়েছে। তারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এখনও রয়েছে। আমলা বলেন, পুলিশ বলেন, সরকারের বিভিন্ন জায়গায় তারা ঘাপটি মেরে আছে। কী নাশকতা কোথায় কী চক্রান্ত করছেন তার ঠিক নেই। এগুলো ঠেকাতে গিয়ে দেশের শান্তি স্থিতিশীল আনতে গিয়ে জীবন দিচ্ছে নয়নের মতো ছেলেরা।’
বিএনপি নেতা আরও বলেন, ‘সারা পৃথিবীর রাষ্ট্রনায়করা শেখ হাসিনার এই পতন এবং নতুন যে একটা গণতন্ত্রের সম্ভাবনার জন্য গণতন্ত্রকামী যারা শহীদ হয়েছেন, যারা আহত হয়েছেন তাদের প্রতি সহানুভূতি জানিয়েছেন একটি দেশ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ছাড়া। তারা শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার জন্য, টিকিয়ে রাখার জন্য নানা ধরনের চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করছে। তারা বলছে, বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন হচ্ছে। নতুন একটা বয়ান তৈরি করে শেখ হাসিনা যে চোর, টাকা পাচারকারী, লুটপাট করেছে, বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের নামে দুর্নীতির অতল গহ্বরে ডুবিয়ে দিয়েছে এই কথাগুলো না বলে তার মতো জঘন্য লুটেরাকে আবার বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করার জন্য তারা চেষ্টা করছে।’
রুহুল কবির রেজভী বলেন, এই দেশের মানুষের অর্থ যেভাবে আত্মসাৎ করা হয়েছে, এটা ভাষায় বর্ণনা করা যাবে না। শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়সহ তাদের নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৩৫০ বিলিয়ন ডলারের টাকা পাচারের ঘটনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ গোয়েন্দা সংস্থা সেটি তদন্ত করছে। জনগণের এই টাকা তারা পাচার করেছে। আরো অনেক আছে, সেগুলো চাপা দেওয়ার জন্য নয়তলা ভবনে স্থানীয় সরকার বিভাগ, ডাক বিভাগসহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এখানে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের প্রমাণ ছিল যাতে সেগুলো আলোর মুখ দেখতে না পারে এজন্য অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। সুতরাং আমাদের সামনে অনেক কাজ বাকি আছে। আমরা যদি স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে না পারি তাহলে এ দেশটি টিকবে না। এদেশের মানুষের নাগরিক স্বাধীনতা রক্ষা পাবে না পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে।’
রিজভী আরও বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আন্দোলনের ফসল। আমরাও তাদেরকে বলি, শুধু শোক বাণী দিয়ে চলবে না। সরকারকে এক মাসের মধ্যে নয়নের বোনকে চাকরি দিতে হবে। যদি না দেওয়া হয় তাহলে বিএনপি সাধ্যমতো এই পরিবারের পাশে দাঁড়াবে। আমি মনে করি, দেশে চলমান স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ও গণতন্ত্র রক্ষায় যে সংগ্রাম তার অন্যতম শহীদ হচ্ছেন শাহানুর রহমান।’