ছেলেরা কেন পিছিয়ে, সেটাই খুঁজতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

টুইট ডেস্ক : দেশে শিক্ষার ক্ষেত্রে লিঙ্গ সমতায় এখন ‘উল্টো স্রোত’ বইছে বলে মনে করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মেয়েদের পাসের হার বেশি হওয়ায় অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেছেন, ছাত্রীদের পাসের হার যেন বেশি। এটার জন্য ধন্যবাদ। কারণ সবসময় আমাদের শুনতে হয়ে জেন্ডার ইক্যুয়ালিটি, এখন তো উল্টোদিকে…।

সরকার প্রধান বলেন, প্রতিবারই দেখি মেয়েদের পাসের হার বেড়ে যাচ্ছে। একসময় তো মেয়েদের পড়াশোনাই করতে দিত না। আরও অনেকে দেশে এখন পড়াশোনা করতে দেয় না। আমাদের দেশের মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে। ছেলেরা কেন পিছিয়ে থাকল, সেটাই খুঁজে বের করতে হবে।

রোববার সকালে ২০২৩ সালের উচ্চ মাধ্যমিকের ফল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। মাধ্যমিকে এবার পাসের হার ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সকালে সব শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হাতে পরীক্ষার ফলের সারসংক্ষেপ তুলে দেন। এবার উচ্চ মাধ্যমিকে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের পাসের হার ৩ দশমিক ৮১ শতাংশ পয়েন্ট বেশি জানিয়ে ছেলেদেরও সমানতালে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

“ছেলেদের বলছি, কেউ যেন পিছিয়ে থেকো না, তোমরা পড়াশোনা করো এবং সমানতালে চল, সেটাই আমরা চাই। এটা মনে হয় ৩ পয়েন্ট ৮১ পারসেন্ট (পার্সেন্টেজ পয়েন্ট) বেশি আমাদের মেয়ে পাস করেছে। আবার জিপিএও (জিপিএ ৫) মেয়েরা বেশি পেয়েছে।”

ফল প্রকাশের অনুষ্ঠানে রসিকতা করে সরকারপ্রধান বলেন, আবার আমি মেয়েদের পক্ষে বেশি বললে… ছেলেরা মন খারাপ করবে। যা হোক, সবাইকে আমার আন্তরিক অভিনন্দন। পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হতে পারেনি, তাদের হতাশ না হওয়ার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, যারা হয়ত ভালো রেজাল্ট করতে পারেনি বা উত্তীর্ণ তে পারেনি, এখানে হতাশ হবার কিছু নেই। অভিভাবক বা শিক্ষক তাদেরকে আমি বলব, যারা উত্তীর্ণ হতে পারেনি, তাদেরকে সহানুভূতি দেখাতে হবে। তারা যে পারে নাই, যেজন্য তাদের গালমন্দ করা না, যে পারে নাই তারও তো মনে কষ্ট আছে। আমি অনুরোধ করব, কেউ উত্তীর্ণ না হলে তাকে আরও সহানুভূতি দেখান। তাকে উৎসাহিত করেন।

চলতি বছর আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয় ১৭ আগস্ট, শেষ হয় ২৫ সেপ্টেম্বর। আর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা ১০দিন পিছিয়ে ২৭ অগাস্ট থেকে শুরু হয়। সবগুলো বোর্ডে একই দিনে পরীক্ষা শুরু না হলেও ১১টি শিক্ষা বোর্ডে একযোগে ফল প্রকাশ করা হল।

‘ভীতিকর পরিবেশ’

দেশে চলমান অবরোধ কর্মসূচির মধ্যে অগ্নি সংযোগের ঘটনার ফলে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে একটা ‘ভীতিকর পরিবেশ’ তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।

এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, “জ্বালাও-পোড়াও কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে তা চলতেই থাকবে। আমাদেরকে অনেকেই বলে-তাদের কেন গ্রেপ্তার করা হল, তারা এটা বলে না, এরা অগ্নি সন্ত্রাসী, পুলিশ হত্যা করেছে, মানুষ হত্যা করেছে।

“এখন ডিজিটাল যুগ, সাধারণ মানুষও ছবি তোলে, সাথে সাথে ছবি পাওয়া যায় এবং একেবারে চিহ্নিত। যারা এই ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা আমাদের নিতে হবে। যারা এভাবে মানুষকে পোড়াবে, মানুষের সম্পদ নষ্ট করবে, জাতীয় সম্পদ নষ্ট করবে, তাদের ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না। অগ্নি সন্ত্রাসের যারা হুকুম ও অর্থদাতা, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা আমাদের নিতে হবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী সেটাই করে যাচ্ছে।”

গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের প্রসঙ্গ ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “তারা শান্তিপূর্ণ সভা যখন করেছে, তাদেরকে কোনো বাধা দেওয়া হয়নি। কিন্তু যখনই তারা আবারর জ্বালাও পোড়াও শুরু করল, বিশেষ করে ২৮ অক্টোবরের পর থেকে তাদের যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড… পুলিশকে পিটিয়ে মারা একটা বিভৎস দৃশ্য, যা দেখলে সহ্য করা যায় না, এমন কী শুনলে আপনারা অবাক হবেন যে রেল লাইন কেটে রেখে দিয়েছে যেন বগি পড়ে যায়, দুর্ঘটনা হয়। দুর্ঘটনা হলে কী হবে সাধারণ মানুষ রেলে চড়ে, অতি সাধারণ মানুষ, তারা মারা যাবে।

“যা হোক, স্থানীয় জনগণ সচেতন ছিল, তারা সঙ্গে সঙ্গে যথাযথ জায়গায় জানিয়েছে বলেই কয়েকটি দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে। তারপরেও তারা ট্রেন পুড়িয়েছে, সাংবাদিকদের ওপর হামলা, মহিলাদের ওপর হামলা করেছে। অথচ যতক্ষণ তারা সঠিকভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি করেছে, ততদিন কিন্তু তাদের কোনো অসুবিধা ছিল না। তাতে বিএনপি বা তাদের দলগুলোর ভাবমূর্তিও আরও বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করার পর এখন জনগণের কাছ থেকে তারা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আর একটা কথা হচ্ছে, যারা মানুষ পুড়িয়ে মারবে বা গাড়ি-ঘোড়া-রেল সবকিছু পোড়াবে, একটা মানুষ হয়ত অনেক কষ্ট করে একটা বাস তৈরি করে সেটা থেকে তার জীবন-জীবিকা চলে, সেটা যখন তার চোখের সামনে পুড়ে যায় বা বাসের ভেতরে হেলপার ঘুমিয়ে আছে সেই অবস্থায় যখন একটা গাড়ি পোড়ায়…, যারা এইভাবে অগ্নি সন্ত্রাসের সাথে জড়িত বা যারা হুকুম দাতা, যারা অর্থদাতা, তদেরকে আমরা কী করব, তাদের কি ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেব? না, তাদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।”

এসব কর্মকাণ্ড বন্ধের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি আশা করি এদের অন্তত একটু শুভবুদ্ধির উদয় হবে, এগুলো বন্ধ করবে। আর বন্ধ না করলে যা ব্যবস্থা নেওয়ার আমাদের নিতেই হবে, জনগণের নিররাপত্তার স্বার্থেই নিতে হবে।”

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।