কারা হচ্ছেন নৌকার কাণ্ডারি

নিজস্ব প্রতিবেদক : আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ৩০০ আসনে দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আজ রোববার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে।

চারদিন ধরে তিন হাজার ৩৬২ জন মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্য থেকে প্রার্থী বাছাই করা হয়েছে, যেখানে বাদ পড়ছেন ‘জনবিচ্ছিন্ন’, ‘অগ্রহণযোগ্য’ ও ‘বিতর্কিত’ সংসদ সদস্যরা।

আর তালিকা প্রকাশের পর ৩০০ আসনে মনোনয়ন পাওয়ারা শেষ পর্যন্ত নৌকার হয়ে লড়তে পারবেন, এমনটাও না। কারণ, জোটের হিসাব-নিকাশে আসন ভাগাভাগিতে বসে পড়তে হতে পারে অনেককে। তবে সব মিলিয়ে আসন্ন ভোটে কারা হচ্ছেন নৌকার কাণ্ডারি তা জানা যাবে আজ বিকেলে।

গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। ভোট অনুষ্ঠিত হবে ৭ জানুয়ারি। তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়নপত্র জমার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর।

তফসিল ঘোষণার পর শুরু হয় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিতরণ। গত চার দিন ধরে চলে ফরম বিতরণ শেষে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয় দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দফায় দফায় বৈঠক শেষে ৩০০ আসনে দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়।

বাদ পড়ছেন অনেক এমপি

আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভার শুরুর দিন থেকেই ওবায়দুল কাদের বলে আসছেন, যেসব সংসদ সদস্য দলে অগ্রহণযোগ্য, বিতর্কিত ও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন তাদের বাদ দেয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগ যে গ্রহণযোগ্য প্রার্থীর ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন তাও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।

শনিবার ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনে জেতার মতো গ্রহণযোগ্য প্রার্থী আমাদের দরকার। আমাদের বিচারের বিষয়, কাকে দিলে দল নির্বাচনে ও জনগণের কাছে অধিকতর গ্রহণযোগ্য হবে। আর বেশ কিছু আসনে বর্তমান সংসদ সদস্যদের বাদ দিয়ে নতুনদের মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

নতুন পুরাতন মিলিয়েই আমরা মনোনয়ন দিচ্ছি। যেখানে পুরনোরা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছেন, সেখানেতো নতুন করে আমাদের ভাবতেই হবে। মনোনয়ন বোর্ডের সভার শুরুর দিন থেকেই খবর আসতে থাকে যে, বিতর্কিত প্রার্থীরা বাদ পড়ছেন।

একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, শুক্রবার পর্যন্ত চার বিভাগের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। আর এরমধ্যে নৌকা মার্কার বর্তমান সংসদ সদস্য বাদ পড়েছেন ২৫ জন। এছাড়া শনিবার পর্যন্ত বাকি তিন বিভাগের মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে গিয়ে আরও বেশ কয়েকজন বর্তমান সংসদ সদস্য বাদ পড়েছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।

আসছে নতুন মুখ

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান নৌকার প্রার্থী হতে ঢাকা-১০ এবং মাগুরা-১ ও ২ আসনের জন্য মনোনয়ন কিনেছেন।

সাকিব মাগুরা-১ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন পাচ্ছেন বলে কয়েকটি দৈনিক পত্রিকা খবর প্রকাশ করলেও নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আর অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদ ঢাকা-১০ থেকে মনোনয়ন পাচ্ছেন বলে খবর বেরিয়েছে।

এই দুই তারকার বাইরে দলের বেশ কয়েকজন ত্যাগী ও তরুণ নেতা প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে যাচ্ছেন।

জোট হবে কি

আওয়ামী লীগ এবার অন্যান্য রাজনৈতিক দল নিয়ে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করবে কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়। যদিও ১৪ দলের শরিক ছয়টি দল নির্বাচন কমিশনে জানিয়েছে, তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নৌকা প্রতীকে ভোটে লড়বেন। তবে আসন্ন ভোটকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ বড় জোট করবে না, এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন দলের ওবায়দুল কাদের।

‘শরিকদের আসলে আমাদের প্রয়োজন আছে কিনা,’ এমন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘কারণ, জোটের বিপরীতে জোট হয়। এখানে আমাদের প্রতিপক্ষ যদি একটা বড় জোট করে, সেটার বিপরীতে আমাদের বড় জোট হবে। তাছাড়া আমরা কেন কেন অহেতুক জোট করতে যাবো। প্রয়োজন না থাকলেতো জোট করবো না।

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, আর জোট করবো যাদের নিয়ে, তাদের তো মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা থাকতে হবে। আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের আদর্শিক জোট ১৪ দল। বিএনপি-জামায়াত জোটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অংশ হিসেবে ২০০৪ সালে গড়ে তোলা হয় এই জোট।

এরপর ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই জোট বেঁধে লড়েছে ১৪ দল। শরিকদের অনেকেই লড়েছেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে।

এবারের ভোটেও নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটগতভাবে ভোট করার কথা জানিয়ে ১৪ দলের ছয়টি দল নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছে।

ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ১৪ দলীয় জোটের চেয়ারম্যান আমাদের নেত্রী (শেখ হাসিনা)। এখানে শরিক সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত আমাদের এখনো হয়নি। তবে আওয়ামী লীগের ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণার পর জোটের শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিষয়ে আলোচনা হবে বলে এর আগে জানিয়েছেন তিনি।

২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ লড়েছিল মহাজোট গড়ে। তখন জাতীয় পার্টিও ছিল সেই জোটের শরিক। পরে ভোটের মাঠে বিএনপি দুর্বল হয়ে পড়ায় মহাজোট গড়ে আর ভোটে মাঠে যাওয়ার প্রয়োজন হয়নি আওয়ামী লীগের। মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের সংসদে বিরোধীদলের ভূমিকা পালন করেছে।

মনোনয়ন প্রত্যাশীকে ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী

দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে ডাক পেলেন নৌকা প্রতীকের তিন হাজার ৩৬২ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী।

রোববার সকালে তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করবেন দলীয় প্রধান। আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে শেখ হাসিনা সবাইকে গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা দেবেন বলে জানা গেছে।