আইআইজি ব্যান্ডউইডথ সীমিত হওয়ার পর বকেয়া পরিশোধ শুরু

ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যান্ডউইডথ সীমিত হওয়ার পর বকেয়া পরিশোধ শুরু করেছে। বকেয়া পরিশোধ শুরু হওয়ার পর থেকে ব্যান্ডউইডথের গতি বাড়ানো হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, তারা গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করতে আগেই বিকল্প উপায়ে ব্যান্ডউইডথ সরবরাহ করে।

সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার বেশি বকেয়া থাকায় গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার পর দেশের অধিকাংশ আইআইজির ব্যান্ডউইডথ (তথ্য-উপাত্ত প্রবাহের গতি) সীমিত করে দেয় বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্‌লস কোম্পানি (বিএসসিপিএলসি)। এতে ইন্টারনেট–সেবায়ও ধীরগতি দেখা দেয়।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় আওতাধীন স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বিএসসিপিএলসি শনিবার জানিয়েছে, ব্যান্ডউইডথ কমিয়ে দেওয়ার পর বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান বকেয়া পরিশোধ শুরু করেছে। বকেয়া পরিশোধ শুরুর পর থেকে ব্যান্ডউইডথের গতিও বাড়াতে শুরু করেছে তারা।

বিএসসিপিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মির্জা কামাল আহম্মদ শনিবার রাতে জানান, এখন পর্যন্ত পাঁচটির মতো আইআইজি প্রতিষ্ঠান ৮ থেকে ৯ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। কাল রোববারের মধ্যে বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর বকেয়া পরিশোধ হয়ে যাবে বলে তিনি আশা করছেন।

মির্জা কামাল আরও বলেন, গত শুক্রবার রাত থেকেই ব্যান্ডউইডথ আপ (গতি বাড়তে) শুরু হয়েছে। শনিবার পর্যন্ত ১০০ জিবিপিএসের (গিগাবিট পার সেকেন্ড) বেশি আপ করা হয়েছে।

আইআইজি প্রতিষ্ঠানগুলো বলেছিল, বিকল্প উপায়ে ব্যন্ডউইডথ আমদানি করে কার্যক্রম চালাচ্ছে তারা। আজ রোববার অফিস খোলার পর বকেয়ার বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে তারা।

আইআইজি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইআইজিএবি) মহাসচিব আহমেদ জুনায়েদ শনিবার জানান, রোববার বকেয়া নিয়ে সংশ্লিষ্ট আইআইজি পদক্ষেপ নেবে।

বিএসসিপিএলসি বৃহস্পতিবার ৫০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ সীমিত করে। দেশে লাইসেন্সধারী আইআইজি প্রতিষ্ঠান আছে ৩৪টি। এর মধ্যে ১৯টি প্রতিষ্ঠানের ব্যান্ডউইডথ সীমিত করা হয়েছিল।

ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ও মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর সূত্রগুলো জানাচ্ছিল, হঠাৎ ব্যান্ডউইডথ সীমিত করে দেওয়ায় বিপাকে পড়ে তারা। গ্রাহকেরা ধীরগতির ইন্টারনেট সমস্যায় ভুগতে শুরু করেন। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় বকেয়ার বিষয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারেনি আইআইজিরা। তবে ইন্টারনেট সেবা স্বাভাবিক রাখতে সাবমেরিন কেব্‌লের বিকল্প ব্যবস্থা ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল কেব্‌লের (আইটিসি) মাধ্যমে সেবা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করছে তারা।

সাবমেরিন কেব্‌ল ব্যবস্থায় সমুদ্র তলদেশ দিয়ে তারের (ফাইবার কেব্‌ল) মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা দেওয়া হয়। আর ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল কেব্‌ল হলো (আইটিসি) স্থলভাগ দিয়ে ইন্টারনেট সেবার মাধ্যম। সাবমেরিনের বিকল্প হিসেবে সরকার আইটিসি লাইসেন্সও দিয়ে থাকে।

বাংলাদেশে সাড়ে চার হাজার জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ ব্যবহৃত হয়। এর অধিকাংশই এত দিন বিএসসিপিএলসি সরবরাহ করে আসছিল। তবে গত কয়েক বছর ধরে ব্যান্ডউইথ আমদানি বেশি হচ্ছে ভারত থেকে আইটিসির মাধ্যমে। দেশে এখন সাতটি প্রতিষ্ঠানের আইটিসি লাইসেন্স রয়েছে। আইটিসি লাইসেন্স থাকা এসব প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগের আবার আইআইজি লাইসেন্সও রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানায়, বর্তমানে সাবমেরিন কেব্‌ল ও আইটিসির মাধ্যমে ব্যান্ডউইডথ সরবরাহ প্রায় সমান। এ ছাড়া আইটিসিতে ব্যান্ডউডইথ আসা বাড়ার বড় কারণ এই ক্ষেত্রে খরচ ও ল্যাটেন্সি কম।

আগাম সতর্কতা ছাড়াই সাপ্তাহিক ছুটির মধ্যে হুট করে ব্যান্ডউইডথ সীমিত করে দেওয়ার এই ঘটনাকে ‘অপেশাদার আচরণ’ বলছিলেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাদের মতে, এতে করে মূলত গ্রাহকেরাই ভোগান্তির শিকার হন। এ ছাড়া রাজস্বের চিন্তা থাকলে বিষয়টি আরও ভালোভাবে সমাধান করতে পারত সাবমেরিন কেব্‌ল কোম্পানি। এখন বিকল্প পদ্ধতির প্রতি প্রতিষ্ঠানগুলো আরও বেশি ঝুঁকবে।

গত ২৬ অক্টোবর রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত খাজা টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সারা দেশে ইন্টারনেট সেবায় ধীরগতি দেখা দেয়। দেশের শীর্ষ কিছু ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ছিল ওই ভবনে। এরপর ইন্টারনেট সেবা স্বাভাবিক হতে বেশ কয়েক দিন লেগে যায়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কিছুদিন পর পর ইন্টারনেটের মতো জরুরি সেবায় বিঘ্ন ঘটলে গ্রাহকের মনে তা বিরূপ প্রভাব ফেলে।