মুক্তি উদযাপন করছে না ইসরায়েলি জিম্মিরা : মুক্ত প্যালেস্টেনিয়ানদের উচ্ছ্বাস

অপহৃত ১৩ ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল। ছবি: সংগৃহীত

টুইট ডেস্ক : হামাসের হাত থেকে শুক্রবার মুক্তি পাওয়া ইযরায়েলি এক জিম্মি বলেছেন, তিনি খুশি তবে গাজায় এখনও হামাসের কাছে জিম্মি থাকা সকলে মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত কোনো উৎসব উদযাপন করবেন না।
হামাস প্যালেস্টাইন ভূখন্ডে যুদ্ধবিরতির প্রথম দিনে ১৩ ইযরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেয়। হামাসের যোদ্বারা ৭ অক্টোবর ইযরায়েলে অভিযান চালিয়ে ২৪০ জন জিম্মির মধ্যে ২৯ জনকে মুক্তি দিয়েছে।

ইয়োনি আশের সেদিন তেল আবিবের কাছে বাড়িতে ছিলেন। হামলার সময় তার স্ত্রী ডোরন আশের কাটজ (৩৪), এবং দুই ও চার বছর বয়সী তাদের দুই সন্তানকে নিয়ে ডোরনের মা এফ্রাত কাটজকে দেখতে যাওয়ার পথে অপহরণ হয়।

জিম্মি পরিবার ফোরামের প্রকাশিত এক ভিডিওতে শুক্রবার সন্ধ্যায় আশের বলেন, আমি খুশি যে আমি আমার পরিবারকে ফিরে পেয়েছি। এটি আনন্দে অশ্রু ঝরানোর মতো বিষয়। তবে আমি উদযাপন করছি না। শেষ জিম্মি ঘরে না ফেরা পর্যন্ত আমি কোন উৎসব উদযাপন করছি না। আমাদের সন্তান, বাবা, মা, বোনেরা বর্তমানে জিম্মি। এমন কিছু মানুষ আছে যাদের হৃদয় এই সময়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে এবং আমি প্রতিটি জিম্মির ঘরে ফেরা নিশ্চিত হতে চাই।

নবায়নযোগ্য চুক্তি বন্দিদের মুক্তির দিকে পরিচালিত করবে। চার দিনের মধ্যে গাজায় বন্দী ৫০ জন জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে। একই সঙ্গে ইযরায়েলের ১৫০ প্যালেস্টেনিয়ানকে মুক্তি দিতে হবে।

অ্যামেরিকা ও ইজিপ্টের সঙ্গে আলোচনার নেতৃত্বদানকারী কাতার জানিয়েছে, দশ থাই জিম্মি ও একজন ফিলিপিনোকেও একটি পৃথক চুক্তিতে শুক্রবার মুক্তি দেয়া হয়েছে।

ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্ত প্যালেস্টেনিয়ানদের উচ্ছ্বাস

ইসরায়েলের কারাগার থেকে প্যালেস্টেনিয়ান নারী ও শিশুদের মুক্তির আনন্দ উদযাপনের আতশবাজিতে শুক্রবার গাজার রাতের আকাশ আলোকিত হয়ে ওঠে। পাশাপাশি তারা দখলদার ইসরায়েলের প্রতি তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সাময়িক যুদ্ধ বিরতি চুক্তির আওতায় ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী প্যালেস্টেনিয়ান এবং হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্তির প্রথম ধাপে এই নারী ও শিশুরা ইসরায়েল থেকে গাজায় ফিরেছে।

সাঁজোয়া যানের পাহারায় দুটি সাদা কোচে বন্দীদের ওফার সামরিক ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে আসার পরে পশ্চিম তীর জুড়ে জনতা উল্লাস করেছে এবং তারা হামাসের পতাকা ও প্যালেস্টেনিয়ানদের সাদাকালো রুমাল নেড়েছে।

ইসরায়েলি হামলায় গাজা উপত্যকা জুড়ে প্রায় ১৫ হাজার প্যালেস্টেনিয়ান মৃত্যুর কথা উল্লেখ করে মুক্তি পাওয়া ২৪ বছর বয়সী মারাহ বাকির বলেন, ‘আমি খুশি তবে আমার মুক্তি শহীদদের রক্তের মূল্যে এসেছে।’

কারাগারে আট বছর ধরে থাকা বাকির বলেন, কারাগারের চার দেয়াল থেকে মুক্তি এটা বিশাল ঘটনা।

মারাহ বাকির পূর্ব যেরুযালেমের বেইট হানিনায় তার পরিবারের বাড়িতে ফিরে আসার পর এএফপি’কে বলেন, আমি আমার শৈশব এবং আমার কৈশোর কারাগারে কাটিয়েছি। যা আমার বাবা-মা এবং তাদের আলিঙ্গন থেকে অনেক দূরে।

গাজায় যুদ্ধ থামানোর জন্য একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে হামাস ১৩ জন জিম্মিকে ইযরায়েলের হাছে হস্তান্তর করার পর ইযরায়েলি কর্তৃপক্ষ মোট ৩৯ জন বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে।

৫৮ বছর বয়সী হানান আল-বারঘৌতি ইযরায়েলি হেফাজত থেকে দুই মাস পর মুক্তি পেয়েছেন। তিনি হামাসের সশস্ত্র শাখার নেতা এবং গাজার জনগণের প্রশংসা করেছেন।

তিনি বলেন, আল্লাহ আমাদের পক্ষ থেকে তাদের উত্তম প্রতিদান দিন। যদি গাজার জনগণ না থাকত, আমরা স্বাধীনতা দেখতে পেতাম না। আমরা কারাগারের ভিতরে ছিলাম, নির্যাতন ভোগ করছিলাম। তারা আমাদের অপমান করেছে। তবে প্যালেস্টেনিয়ান প্রতিরোধের জন্য আমারা অত্যন্ত গর্ব বোধ করেছি এবং আমাদের মর্যাদা সমুন্নত হয়েছে। এই প্রতিরোধের জন্য অভিনন্দন জানাই।

ধূসর সোয়েটার পরা প্যালেস্টেনিয়ান বন্দীদের দখলকৃত পশ্চিম তীরের বেইতুনিয়ায় উচ্ছ্বসিত সমর্থকদের সামনে প্যারেড করানো হয়েছিল। এদের মধ্যে অনেকেই তখন কান্নায় ভেঙে পড়েন।

তাদের মুক্তির আগে, ইযরায়েলি কর্তৃপক্ষ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করায় কারাগারের কাছে সাদা ধোঁয়ার মেঘে বাতাস ভরে যায়।

প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, ইযরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে তিনজন গুলিবিদ্ধ ও আহত হয়েছেন।