১৫ বছরে সেবা খাতে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা ঘু’ষ লেনদেন

টুইট ডেস্ক: ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সেবা খাতে জাতীয় পর্যায়ে মোট ঘুষের ন্যূনতম প্রাক্কলিত পরিমাণ ১ লাখ ৪৬ হাজার ২৫২ কোটি টাকা। সেবা খাতে দুর্নীতি নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের (টিআইবি) প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য।

মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) সকালে এই প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে পাসপোর্ট বিভাগে, আর ঘুষের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি ছিল বিচার বিভাগে। বিচারিক সেবা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার দুর্নীতি ও ঘুষের হার অব্যাহত রয়েছে, ফলে সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বড় বাধা কাটছে না।

টিআইবির প্রতিবেদন বলছে, ২০২৩ সালে জাতীয়ভাবে প্রাক্কলিত ঘুষের পরিমাণ ১০ হাজার ৯০২ কোটি টাকা। যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং জিডিপির শূন্য দশমিক ২২ শতাংশ। এই পরিমাণ অর্থ দেশের মানুষ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সেবা পেতে ঘুষ দিয়েছে। যার মধ্যে ভূমিতে ২ হাজার ৫১৩ কোটি, বিচারিক সেবায় ২ হাজার ৫১৩ কোটি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থায় ২ হাজার ৩৫৭ কোটি ৫০ লাখ, পাসপোর্টে ১ হাজার ৩৫০ কোটি, স্থানীয় সরকারে ৮৪০ কোটি ৯০ লাখ, বিদ্যুতে ৩০৯ কোটি ৬০ লাখ, স্বাস্থ্য খাতে ২৩৫ কোটি ১০ লাখ ও শিক্ষায় ২১৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। তালিকায় মোট ১৪টি খাতের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, সেবা পেতে খানা বা পরিবার প্রতি ৫ হাজার ৬৮০ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। গড় ঘুষের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি বিচারিক সেবা, ভূমিসেবা ও ব্যাংকিং খাতে। সেবা পেতে ৭০ দশমিক ৯ শতাংশ পরিবার দুর্নীতি এবং ৫০ দশমিক ৮ শতাংশ পরিবার ঘুষের শিকার হয়েছে।

আদিবাসী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও নারী সেবা গ্রহীতাদের ঘুষের শিকার হওয়ার পরিসংখ্যানও তুলে ধরে টিআইবি। সেখানে দেখা যায়, আদিবাসী সেবা গ্রহীতাদের ৩৭ দশমিক ৮ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের ৩৫ দশমিক ৮ শতাংশ এবং নারী সেবা গ্রহীতাদের ৩৪ দশমিক ৬ শতাংশ সেবা নিতে গিয়ে দুর্নীতির শিকার হয়েছে। সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেও তাদের ওপর বোঝা চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। ফলে তাদের প্রান্তিকতা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। নারীরা স্থানীয় সরকার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেবা নিতে গিয়ে পুরুষদের চেয়ে বেশি দুর্নীতির শিকার হয়েছেন।

ঘুষ ব্যতীত অন্যান্য দুর্নীতির শিকার হওয়া খানার হারের বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৪৪ দশমিক ৮ শতাংশ খানা সময়ক্ষেপণের শিকার হয়েছে, ২৭ দশমিক ৩ শতাংশ খানা হয়রানি ও দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছে, ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ খানা হয়রানি ও স্বজনপ্রীতির শিকার হয়েছে এবং এক দশমিক ৬ শতাংশ খানা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের শিকার হয়েছে।

ঘুষের শিকার হওয়া ৫০ দশমিক ৮ শতাংশের মধ্যে ৭৭ দশমিক ২ শতাংশ জানিয়েছে, ঘুষ না দিলে সেবা পাওয়া যাবে না, তাই তারা ঘুষ দিয়েছেন। এছাড়াও ৪৩ শতাংশ জানিয়েছেন, নির্ধারিত ফি জানা না থাকায় তারা ঘুষ দিয়েছেন এবং ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ যথাসময়ে সেবা পাওয়ার জন্য ঘুষ দিয়েছেন। অন্তর্বর্তী খানাগুলো দুর্নীতির অভিযোগ দায়েরের যে ব্যবস্থা রয়েছে, সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে দেখা যায় ৫৯ দশমিক ৬ শতাংশ জানিয়েছেন তারা তা জানেন না। যারা জানে, তাদের মধ্যে ৩০ দশমিক এক শতাংশ খানা দুদক সম্পর্কে জানে এবং মাত্র ২ শতাংশ সরকারের অভিযোগ নিরসন ব্যবস্থা সম্পর্কে অবগত রয়েছে।

টিআইবির নিবার্হী পরিচালক এ সময় বলেন, ২০২৩ সালে সার্বিকভাবে খানাগুলো গড়ে ৫ হাজার ৬৮০ টাকা ঘুষ ও নিয়মবহির্ভূত অর্থ দিতে বাধ্য হয়েছে।