মধ্যরাতে ইমরান খানের সমর্থকদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানে ব্যাপক অভিযান
টুইট ডেস্ক: পাকিস্তানের কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভরত সমর্থকদের বিরুদ্ধে মধ্যরাতে বড় ধরনের অভিযান চালিয়েছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। মূলত ইমরানের মুক্তির দাবিতে তারা ইসলামাবাদে জড়ো হয়েছিলেন।
এছাড়া দিনভর সহিংসতা ও বিশৃঙ্খল দৃশ্যের মধ্যে শত শত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাকিস্তানের স্থানীয় মিডিয়ার বরাত দিয়ে বুধবার (২৭ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী কারাগারে বন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে রাজধানী ইসলামাবাদে জড়ো হওয়া সমর্থকদের ওপর মধ্যরাতে ব্যাপক অভিযান চালিয়েছে বলে স্থানীয় মিডিয়া জানিয়েছে।
ইমরান খানের স্ত্রীর নেতৃত্বে নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের একটি কনভয় দেশটির এই রাজধানী শহরের অত্যন্ত সুরক্ষিত রেড জোনের প্রান্তে বেশ কয়েকটি নিরাপত্তা বাধা পেরিয়ে পৌঁছে যায়। পরে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী ইসলামাবাদের কেন্দ্রস্থলে জড়ো হয়েছিলেন।
ইসলামাবাদের রেড জোন এলাকাটি পাকিস্তানের শক্তিশালী সেনাবাহিনীর সৈন্যদের মাধ্যমে সুরক্ষিত এবং এখানে পার্লামেন্টের পাশাপাশি বিদেশি মিশনসহ দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অফিস এবং ভবন রয়েছে। মঙ্গলবার রাতে এই অভিযান চালানোর আগে চার আধাসামরিক বাহিনীর সৈন্যসহ অন্তত ছয়জন নিহত হয়।
স্থানীয় সম্প্রচারকারী জিও নিউজ এবং এআরওয়াই উভয়ই রিপোর্ট করেছে, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অন্ধকারের মধ্যে ইসলামাবাদের প্রাণকেন্দ্রে বিশাল অভিযান চালিয়েছে। অভিযানের আগে সেখানে লাইট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল এবং এর পাশাপাশি দফায় দফায় বিপুল সংখ্যক টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। আর এতে প্রতিবাদ সমাবেশ প্রায় সম্পূর্ণভাবে ছত্রভঙ্গ হয়ে গেছে বলে এই দুটি সংবাদমাধ্যম রিপোর্ট করেছে।
ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) বলেছে, গত বছরের আগস্ট থেকে কারাগারে বন্দি থাকা ইমরান খানের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত রেড জোনে অবস্থান কর্মসূচির পরিকল্পনা করেছিল তারা।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নকভি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় প্রতিবাদকারীদের সাথে কোনও আলোচনার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে (বিক্ষোভকারীরা) অস্ত্র ব্যবহার করার পাশাপাশি তারা ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ছিল এবং শহরে জমায়েতের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তারা সেটি ভঙ্গ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ সৈন্যদের মৃত্যুর জন্য বিক্ষোভকারীদের দায়ী করেছেন। মূলত শ্রীনগর হাইওয়েতে পিটিআই কর্মীরা দেশটির আধাসামরিক বাহিনী রেঞ্জার্স’র সদস্যদের ওপর গাড়ি উঠিয়ে দিয়েছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছিল। যার ফলে দুই পুলিশ অফিসারসহ চারজন রেঞ্জার্স সদস্য নিহত হন এবং অন্য আরও পাঁচজন আহত হন।
তবে পিটিআই-এর মুখপাত্র জুলফিকার বুখারি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, সংঘর্ষে দুই বিক্ষোভকারী নিহত এবং ৩০ জন আহত হয়েছেন। যা ২৪ কোটিরও বেশি লোকের দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে গত কয়েক মাসের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ রাজনৈতিক সহিংসতা।
বিক্ষোভকারীদের একজনকে গুলি করে হত্যা করা হয় এবং অন্যজনকে একটি গাড়ি চাপা দেয় বলে বুখারি বলেন। অবশ্য কর্তৃপক্ষ মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব দেয়নি এবং রয়টার্সও স্বাধীনভাবে এই তথ্য যাচাই করতে পারেনি।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, সরকারকে অবশ্যই বিক্ষোভকারীদের অধিকার সম্পূর্ণরূপে রক্ষা করতে হবে এবং অবিলম্বে “শ্যুট অন-সাইট” বা “দেখামাত্র গুলি চালানোর” আদেশ প্রত্যাহার করতে হবে। বিক্ষোভ দমনে সেনাবাহিনীকে অযথা এবং অতিরিক্ত এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছে সংস্থাটি।
এর আগে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মী-সমর্থকদের শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তিনি বলেন, “পাকিস্তানি জনগণ ও পিটিআই কর্মীদের আমি স্যালুট জানাই যারা নিজেদের অধিকারের জন্য দাঁড়িয়েছে, শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করছে এবং এই দেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়া মাফিয়ার কাছ থেকে সত্যিকারের স্বাধীনতা চাইছে।
নিজের বার্তা পরিষ্কার জানিয়ে ইমরান আরও বলেছেন, “শেষ বল পর্যন্ত লড়াই করুন। আমাদের দাবি সম্পূর্ণ পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা পেছনে ফিরব না।”