উত্তাল পাকিস্তানে পুলিশসহ নি’হত ৬, ইসলামাবাদে সেনা মোতায়েন
টুইট ডেস্ক: সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মুক্তি ও সরকারের পদত্যাগের দাবিতে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) ডাকা ইসলামাবাদমুখী জনস্রোতে সহিংস রূপ ধারণ করেছে। পিটিআই নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে দেশটিতে ৬ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
নিহতদের মধ্যে চারজন দেশটির আধাসামরিক বাহিনী রেঞ্জার্সের সদস্য এবং অন্য দুজন পুলিশ কর্মকর্তা। এছাড়া উত্তাল পাকিস্তানে আহত হয়েছেন আরও শতাধিক পুলিশ সদস্য। বিক্ষোভ ও মিছিলে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে দেশটির রাজধানী ইসলামাবাদ।
এমন অবস্থায় রাজধানী ইসলামাবাদে সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে দেশটির শেহবাজ সরকার। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) বিক্ষোভে ক্রমবর্ধমান সহিংসতার মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার রাজধানী ইসলামাবাদে সেনা মোতায়েন করেছে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে সামরিক বাহিনীকে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং দুর্বৃত্তদের কঠোরভাবে মোকাবিলায় সহায়তা করার অনুমতি দিয়েছে।
প্রজ্ঞাপনটিতে অনাচার রোধে যেখানে প্রয়োজন সেখানে কারফিউ জারি করার ক্ষমতাও দিয়েছে সেনাবাহিনীকে। এছাড়া নিরাপত্তা বাহিনীকেও দুর্বৃত্ত এবং সমস্যা সৃষ্টিকারীদেরকে গুলি করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলেও বেশ কয়েকটি সূত্র জিও নিউজকে ইঙ্গিত দিয়েছে।
তারা বলেছেন, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী ও চরমপন্থিদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সকল দুর্বৃত্তদেরও চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে।
জিও নিউজ বলছে, শ্রীনগর হাইওয়েতে মর্মান্তিক এক ঘটনার পরে সেনা মোতায়েন ও “দুবৃত্তদের” গুলি করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সেখানে পিটিআই কর্মীরা রেঞ্জার্স সদস্যদের ওপর একটি গাড়ি উঠিয়ে দিয়েছে বলে জানা গেছে। যার ফলে দুই পুলিশ অফিসারসহ চারজন রেঞ্জার্স সদস্য নিহত হয়েছেন এবং অন্য আরও পাঁচজন আহত হয়েছেন।
নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মতে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ওপর হামলায় এ পর্যন্ত চারজন রেঞ্জার এবং দুইজন পুলিশ কর্মকর্তার প্রাণ গেছে। এছাড়া শতাধিক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর।
মূলত ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে পার্লামেন্টের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে পিটিআই। বিক্ষোভকারীদের আটকে দেওয়ার লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষ দু’দিন ধরে ইসলামাবাদে নিরাপত্তা লকডাউন ঘোষণা করেছে। ইসলামাবাদের আশপাশের সব মহাসড়কে ব্যারিকেড তৈরি করে বিক্ষোভকারীদের বাধা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া ইসলামাবাদের প্রধান প্রধান সব সড়ক ও মহাসড়কে শিপিং কনটেইনার ব্যবহার করে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে। পিটিআইয়ের বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘিরে ইসলামাবাদে দাঙ্গা পুলিশ ও আধা-সামরিক বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) বিক্ষোভকারীদের বাধা দেওয়ার জন্য পূর্বাঞ্চলীয় পাঞ্জাব প্রদেশের একাধিক শহর ও টার্মিনালের মাঝে চলাচলকারী সব ধরনের গণপরিবহনও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। বিক্ষুব্ধ কর্মীরা অন্যান্য ইস্যুগুলোর মধ্যে কারাবন্দি সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর মুক্তি চায়।
প্রসঙ্গত, ইসলামাবাদে পার্লামেন্ট অভিমুখে পিটিআইয়ের এবারের পদযাত্রাকে “চূড়ান্ত আহ্বান” বলে অভিহিত করেছেন ইমরান খান। গত বছরের আগস্টে পিটিআইয়ের এই প্রতিষ্ঠাতাকে কারাগারে পাঠানোর পর থেকে তার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন করে আসছে দলটি।
এর আগে গত অক্টোবরের শুরুর দিকে ইসলামাবাদে পিটিআইয়ের বিক্ষোভ ঘিরে ব্যাপক সহিংসতা ঘটেছিল দেশটিতে।