গম্ভীরের সঙ্গে মধুচন্দ্রিমা শেষ, ডানা ছাটছে ভারত
টুইট ডেস্ক: ভারত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জেতার পরপরই রোহিত শর্মাদের কোচের পদ ছেড়ে দিয়েছিলেন রাহুল দ্রাবিড়। তার স্থলাভিষিক্ত হিসেবে কোচের দায়িত্বে আসেন গৌতম গম্ভীর। কোচ হওয়ার পর বাড়তি সুবিধা দেওয়া হয়েছিল গম্ভীরকে।
ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, দল নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের কাছে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর চাপ বেড়েছে গম্ভীরের ওপর। যে সুবিধা তিনি পাচ্ছিলেন ভবিষ্যতে সেটি পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
কোচ হওয়ার পর এখনও পর্যন্ত তেমন কোনো সাফল্য এনে দিতে পারেননি গম্ভীর। তার প্রথম সফর ছিল শ্রীলঙ্কা। সেখানে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতলেও ২৭ বছর পর শ্রীলঙ্কার কাছে একদিনের সিরিজ হেরেছিল ভারত। ঘরের মাঠে বাংলাদেশকে টেস্টে ও টি-টোয়েন্টিতে হারালেও নিউজিল্যান্ডের কাছে ০-৩ ব্যবধানে হেরেছে দল।
এই প্রথমবার ঘরের মাটিতে তিন বা তার বেশি টেস্টের সিরিজে হোয়াইটওয়াশের লজ্জার রেকর্ড গড়ে ভারত। অর্থাৎ, গম্ভীরের কোচিংয়ে ভারত দু’টি টি-টোয়েন্টি, দু’টি টেস্ট ও একটি একদিনের সিরিজ খেলেছে। পাঁচটির মধ্যে দু’টি সিরিজ হেরেছে তারা। এই হারের দায় দলের পাশাপাশি কোচের ওপরেও বর্তায়। সূত্রের খবর, গম্ভীরকে সে কথা জানিয়ে দিয়েছে বোর্ড।
কোচ হওয়ার পর গম্ভীরকে বাড়তি সুবিধা দিয়েছিল বোর্ড। সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বোর্ডের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘রবি শাস্ত্রী বা রাহুল দ্রাবিড় যা সুবিধা পাননি, তা-ই পেয়েছিলেন গম্ভীর। বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী, দল নির্বাচনের সময় কোচ সেখানে থাকতে পারেন না। কিন্তু গম্ভীরকে সেই অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া সফরের দল নির্বাচনের বৈঠকে তিনি ছিলেন।’
গম্ভীরের জোরাজুরিতেই আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি কলকাতা নাইট রাইডার্সের হর্ষিত রানা ও সানরাইজার্স হায়দরাবাদের নীতীশ রেড্ডি অস্ট্রেলিয়া সফরের দলে জায়গা পেয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। নির্বাচকরা প্রথমে তাদের কথা ভাবেননি। কিন্তু গম্ভীর তাদের বাধ্য করেছেন এই দুই তরুণকে দলে রাখতে। তিনি যদি এরপরেও সাফল্য দিতে না পারেন তাহলে পরের সিরিজ থেকে এই সুবিধা তিনি পাবেন না। অর্থাৎ, দল নির্বাচনের সময় তিনি থাকতে পারবেন না। নির্বাচকদের ওপরেই ভরসা করতে হবে তাঁকে।
গম্ভীরের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন-
কোচ হওয়ার পর যে সুবিধা পেয়েছেন সেই অনুযায়ী সাফল্য দিতে পারেননি গম্ভীর। উল্টো তার বেশ কিছু সিদ্ধান্তের সমালোচনা চলছে। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে পিচ বুঝতে ভুল করেছে ভারত। বেঙ্গালুরুর মেঘলা আবহাওয়ায় টস জিতে রোহিত শর্মার ব্যাট করার সিদ্ধান্ত তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ।
পরে রোহিত স্বীকার করে নিয়েছিলেন যে পিচ বুঝতে পারেননি। সেই দায় কিন্তু কোচেরও। ব্যাটিং অর্ডারে কখনও বিরাট কোহলিকে তিন নম্বরে ব্যাট করতে পাঠানো, কখনও ঋষভ পান্তকে চারে নামিয়ে দেওয়ার মতো কাজ গম্ভীর করেছেন। টেস্টে ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে সাধারণত এত পরীক্ষা কেউ করেন না। যদি এই পরীক্ষায় ভারত সাফল্য পেত, তাহলে হয়তো প্রশ্ন উঠত না। উল্টে তাঁর সিদ্ধান্তের প্রশংসা হতো। কিন্তু সেটা হয়নি। ফলে প্রশ্ন উঠছে।
এত কিছুর পরেও অবশ্য অধিনায়ক রোহিতকে পাশে পাচ্ছেন গম্ভীর। নিউজিল্যান্ডের কাছে হারের পর রোহিত জানিয়েছেন, মাত্র তিন-চার মাস দেখে কোনও কোচ বা সাপোর্ট স্টাফকে নিয়ে মন্তব্য করা উচিত নয়। দলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সময় লাগে। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে গম্ভীরের নেতৃত্বাধীন কোচিং দল তাদের সব রকম সাহায্য করেছে বলেই জানিয়েছেন রোহিত।
অস্ট্রেলিয়া সফরই শেষ সুযোগ?
নিউজিল্যান্ড সিরিজটা ভারতকে বাস্তবতা দেখাল যেন। যার রেশ লেগেছে গৌতম গম্ভীরের ওপরও। এখনই হয়তো চাকরি যাবে না। কারণ, ভারতীয় বোর্ডের নিয়ম আলাদা। সেখানে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হলে সেই সময়টা দেওয়া হয়। কিন্তু দ্রাবিড় যে সাফল্য দিয়ে ছেড়েছিলেন সেখান থেকে দায়িত্ব নেওয়ায় বাড়তি চাপ রয়েছে গম্ভীরের ওপর। তিনিও আইপিএলের কলকাতা নাইট রাইডার্সকে চ্যাম্পিয়ন করেই কোচের পদ পেয়েছেন।
অর্থাৎ, গম্ভীর জানেন কীভাবে জিততে হয়। তিনি নিজের সুনাম ধরে রাখার আরও একটি সুযোগ পাবেন। অস্ট্রেলিয়ায় সিরিজ জিততে পারলে কিছুটা হলেও আগের ব্যর্থতা ঢাকতে পারবেন গম্ভীর। তবে অস্ট্রেলিয়া থেকে হেরে ফিরলে কিন্তু চাকরি বাঁচানো কঠিন হয়ে যাবে কোচ গম্ভীরের।