৩ রানের আক্ষেপে শেষ হলো মিরাজের লড়াই

টুইট ডেস্ক : ড্রেসিং রুম থেকে বাইরে এসে তালি দিয়ে মেহেদী হাসান মিরাজকে অভিনন্দন জানালেন মুশফিকুর রহিম। কোচিং স্টাফের সদস্যরাও তুমুল করতালিতে স্বাগত জানালেন তাকে।

ড্রেসিং রুমে ঢোকার মুখে তার পিঠ চাপড়ে দিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু এসবে কী আর সান্ত্বনা মেলে! ত্বরিত পায়ে ভেতরে চলে গেলেন মিরাজ। দ্রুতই আবার ফিল্ডিংয়ে নামতে হবে। আক্ষেপটুকুও তো মাঠেই ফেলে আসতে হবে!

সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ১৩ রান দূরে দিনের শুরু করেছিলেন মিরাজ। কিন্তু সেই পথটুকুও পাড়ি দিতে পারলেন না। ২৫ মিনিট পর যখন বিদায় নিলেন, তখনও ঘাটতি তিন রানের।

যোগ্য একজন সঙ্গী এ দিন পেলেন না তিনি। নিজেও শেষটায় গিয়ে পারলেন না। টেস্ট ক্যারিয়ারে তাই প্রথমবার আউট হলেন নব্বই ছুঁয়ে।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মিরপুর টেস্টের চতুর্থ সকালে মিরাজ আউট হন ৯৭ রানে। তার বিদায় দিয়েই বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ৩০৭ রানে। জয়ের জন্য শেষ ইনিংসে প্রোটিয়াদের প্রয়োজন ১০৬ রান।

এ বছর এই নিয়ে চারবার শতরানের সম্ভাবনা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত পারলেন না মিরাজ। গত মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে ৮১ রানে অপরাজিত রয়ে যান তিনি সঙ্গীর অভাবে। অগাস্টে পাকিস্তান সফরে রাওয়ালপিন্ডিতে পরপর দুই টেস্টে ৭৭ ও ৭৮ রানের দুর্দান্ত দুটি ইনিংস খেলে জয়ের ভিত গড়ে দেন তিনি।

এবার সেঞ্চুরির আরও কাছে গিয়ে থমকে গেলেন। যদিও দিনের শুরুতে মাইলফলকটি মনে হচ্ছিল তার নাগালেই। উইকেট বাকি তখনও তিনটি। কিন্তু দিনের প্রথম ওভারেই কাগিসো রাবাদা ফিরিয়ে দেন নাঈম হাসানকে।

এরপর ক্রিজে যাওয়া তাইজুল ইসলামের ব্যাটের হাতও খারাপ নয়। তবে তিনিও পারেননি মিরাজকে সঙ্গ দিতে। শেষ জুটিতে হাসান মাহমুদের ওপর আর সেভাবে ভরসা করতে পারেননি মিরাজ। রাবাদাকে চালিয়ে খেলার চেষ্টায় তৃতীয় স্লিপে ধরা পড়েন তিনি। ১০ চার ও ১ ছক্কার ইনিংসটি থামে ১৯১ বলে।

সেঞ্চুরি না হলেও অবশ্য ইনিংসটির ওজন কমছে না। বরং তার একমাত্র টেস্ট সেঞ্চুরি যেটি, ২০২১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১০৩ রানের সেই ইনিংসটির চেয়ে নিশ্চিতভাবেই এগিয়ে থাকবে এই ইনিংস। প্রথম ইনিংসে ১০৬ রানে গুটিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসেও ছিল চরম বিপদে।

তিনি ক্রিজে নামার সময় দলের রান ছিল ৫ উইকেটে ১০৬। একটু পরই লিটন দাসকে হারিয়ে রান হয়ে যায় ৬ উইকেটে ১১২। ইনিংস পরাজয়ের শঙ্কায় তখন কাঁপছে দল।

সেখান থেকেই দলকে অনেকটা উদ্ধার করেন মিরাজ। অভিষিক্ত জাকের আলির সঙ্গে গড়েন ১৩৮ রানের জুটি, যে কোনো উইকেটে যা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের রেকর্ড জুটি। শুধু প্রতিরোধ গড়াই নয়, দারুণ সব শট খেলে দলের রান বাড়ান তিনি দ্রুত।

মিরাজ রান পাওয়া মানেই নান্দনিক কিছু অফ ড্রাইভ আর কাভার ড্রাইভের প্রদর্শনী। যথারীতি এই ইনিংসেও তা ছিল। সঙ্গে ছিল স্পিনারদের বিপক্ষে দারুণ সব সুইপ। সব মিলিয়ে শুধু ইনিংস পরাজয় এড়ানোই নয়, দলকে অভাবনীয় এক জয়ের স্বপ্নও দেখায় মিরাজের ব্যাট।

সেই স্বপ্ন নিয়েই শুরু হয়েছিল চতুর্থ দিন। তবে তা উবে যায় দ্রুতই। মিরাজের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরিও মিলিয়ে যায় হাতছানি দিয়ে।

তার একমাত্র টেস্ট সেঞ্চুরির সময়ও এমন টানাপোড়েন ছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চট্টগ্রামে বাংলাদেশের নবম উইকেটের পতন যখন হয়েছিল, মিরাজ তখন অপরাজিত ৯২ রানে।

তবে শেষ ব্যাটসম্যান মুস্তাফিজুর রহমান সেবার ভালোভাবেই সঙ্গ দিতে পেরেছিলেন। মিরাজ শতরান ছুঁয়ে শেষ পর্যন্ত ১০৩ রানে আউট হয়েছিলেন।

এবার তা হয়নি। তবে এই ইনিংসে আরও একবার ফুটে উঠেছে মিরাজের অসাধারণ ফর্ম আর এই দলে তার গুরুত্ব।

এই বছর এখনও পর্যন্ত ৪৬১ রান করে দলের সর্বোচ্চ রান স্কোরার মিরাজ। অথচ তিনি ব্যাট করেছেন ৭-৮ নম্বরে, এমনকি ৯ নম্বরেও। বল হাতেও তিনি দলের সফলতম। ৭ টেস্টে শিকার ২৬টি।

শুধু এই বছর নয়, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের এই চক্রে দলের সবচেয়ে বেশি রান (৯ টেস্টে ৫৫৪) ও সবচেয়ে বেশি উইকেট (৯ টেস্টে ৩৪টি) তার।

সব মিলিয়েই দলে এখন তিনি মহামূল্য। স্রেফ শতরানের আক্ষেপটুকু রয়ে গেল।