ভ্রমণজনিত কোষ্ঠকাঠিন্য ও এর প্রতিকার

প্রতীকী ছবি

টুইট ডেস্ক : ভ্রমণ একটি সুন্দর অভিজ্ঞতা কিন্তু অনেকের জন্য এটি কোষ্ঠকাঠিন্যের সৃষ্টি করতে পারে। যেকোনো ভ্রমণের সময়, কোষ্ঠকাঠিন্য অনুভব করা হতে পারে, যা ভ্রমণের আনন্দে উপভোগে সমস্য দৃষ্টি করতে পারে। এটি একটি সাধারন সমস্যা, তবে সেটির প্রতিকার নেয়া গুরুত্বপূর্ণ।

যেকোনো ভ্রমণের সময়ই কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য পুরো ভ্রমণের আনন্দটাই মাটি হয়ে যায়। ভ্রমণের সময় অনেক চেষ্টার পরও অনেকের এই অভিজ্ঞতা এড়াতে পারেন না। এই সমস্যাটি ভ্রমণজনিত কোষ্ঠকাঠিন্য নামে পরিচিত।

গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট ড্যারেন ব্রেনার সিএনএনকে বলেন, ভ্রমণের সময় হজমে সমস্যা না থাকা সত্ত্বেও অনেকেই নিজের মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণগুলো দেখেন। কেউ কেউ মাঝেমধ্যে ভ্রমণের সময় কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগে থাকেন। আবার অনেকেই তাদের সব ভ্রমণেই এই সমস্যাটিতে ভোগেন।

মিশিগান মেডিসিনের গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ও নিউট্রিশনাল সায়েন্সের অধ্যাপক উইলিয়াম চে এই প্রসঙ্গে বলেন, ভ্রমণের সময় কোষ্ঠকাঠিন্য একটি বহু উপসর্গ বা লক্ষণজনিত সমস্যা। সে কারণেই এর প্রতিকারের জন্যও বহুমুখী পদ্ধতি অনুসরণের প্রয়োজন হতে পারে।

আলাদা টাইম জোনে থাকা বা ভ্রমণের ক্ষেত্রে ব্যক্তির নিয়মিত সূচির বাইরে অন্য কোনো সূচিতে ভ্রমণ করার ফলে ভ্রমণজনিত কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে বলে কয়েকজন পরিপাক বিশেষজ্ঞ মত দিয়েছেন। ভ্রমণের কারণে মানবদেহের সার্কেডিয়ান রিদমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।

দিনের ২৪ ঘন্টার চক্রে মানবদেহে বিভিন্ন সময় আলো কিংবা অন্ধকারে থাকার ফলে শারীরিক, মানসিক ও আচরণগত কিছু তারতম্য ঘটে। একেই সার্কেডিয়ান রিদম বলা হয়।

চে বলেন, বেশিরভাগ মানুষই সকালে ঘুম থেকে উঠার পর মলত্যাগ বা কোষ্ঠ পরিষ্কার করেন।

মানুষ ঘুম থেকে ওঠার পর ও বিশেষ করে কোনো খাবার খাওয়ার পর শরীর এমন কিছু হরমোন নি:সৃত করে যা কোষ্ঠ পরিষ্কারে সাহায্য করে।

এ বিষয়ে গ্যাস্ট্রোএনটেরোলজিস্ট ড্যারেন ব্রেনার বলেছেন, মানুষকে ভ্রমণ বা কাজের জন্য এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতেই হয়। তাই সার্কেডিয়ান রিদমের প্রভাব দূর করতে আলাদা টাইম জোন চাইলেও এড়ানো যায় না।

অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘ ভ্রমণের মাধ্যমও এ সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। যাত্রীরা ভ্রমণের জন্য গাড়ি চালিয়ে, বাসে, ট্রেনে বা আকাশপথে নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে পারেন। এতে সবারই ভ্রমণের জন্য ব্যবহৃত যানটিতে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকতে হয়। এর ফলেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে কিছুটা হলেও নড়াচড়া করতে হয়। দীর্ঘ যাত্রায় অনেকেই এটা করতে পারেন না।

গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ও নিউট্রিশনাল সায়েন্স এর অধ্যাপক উইলিয়াম চে বলেন, আকাশপথে ভ্রমণের কারণে উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য বাতাসের চাপ কমে যাওয়ায় পেটের ভেতরের বাতাস প্রসারিত হয়। এতে পেট ফুলে যেতে পারে। এর ফলেও কোষ্ঠকাঠিন্যে হতে পারে।

এজন্য ভ্রমণের সময় পেট ফুলে যাওয়া ঠেকাতে সাধারণত পেটে গ্যাস বা বাতাসের প্রসারণ ঘটায় এমন খাবার ও কোমল পানীয় খেতে নিষেধ করেছেন চে।

পেটে বাতাসের প্রসারণ রোধে পেপারমিন্ট অয়েল ক্যাপসুল খুব উপকারী বলে জানান তিনি। যথাযথভাবে খাবার চিবিয়ে খেতে ও ধীরে ধীরে পানি পান করতে পরামর্শ দেন চে।

চুইংগাম চিবোতে বা শক্ত ক্যান্ডি চুষে খেতেও নিষেধ করেছেন চে। কারণ এর ফলে প্রয়োজনের চেয়েও বেশি বাতাস পেটে ভেতরে চলে যেতে পারে।

চে বলেন, ভ্রমণের সময় নড়াচড়া না করা ও দীর্ঘ সময় বসে থাকার ফলে ভ্রমণজনিত কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে হাত ও পায়ের নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম করা যেতে পারে।

খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আসলে তার অন্ত্রে থাকা পরিপাকে সহায়তাকারী অণুজীবগুলোর মধ্যেও পরিবর্তন হয়ে থাকে। ব্রেনার বলেছেন, এটিও কোষ্ঠকাঠিন্য তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারে।

আবার অনেক সময় শরীরে পর্যাপ্ত পানির অভাবেও এই সমস্যাটি দেখা যায়। শরীরে পানির অভাব পানি কম পান করা ছাড়াও অ্যালকোহল গ্রহনের ফলে কিংবা ভ্রমণের সময় বিমানে থাকা শুষ্ক বাতাসের কারণে হতে পারে।

ভ্রমণে নানা ধরণের খাবারের স্বাদ নেয়াটাই স্বাভাবিক। এর পাশাপাশি পানির অভাবে যেন না হয় সেজন্য বিভিন্ন শাকসবজী, পিয়ার, কেইল কিংবা ব্রকোলি খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ব্রেনার।

নানা উদ্বেগ ও উৎকন্ঠাজনিত কারণেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। ভ্রমণের সময় এসব চাপ ও উদ্বেগের ফলে অন্ত্র বা পেটের নড়াচড়ায় প্রভাব পড়ে। এই সমস্যা উপশমের ক্ষেত্রে ডায়াফ্র্যাগম্যাটিক ব্রিদিং বা বেলি ব্রিদিং একটি কার্যকরী কৌশল হতে পারে।

চে বলেন, গভীর শ্বাস নেয়ার সঙ্গে আমাদের পেটের যে আকৃতি হয় তার ফলে শ্বাস ছাড়ার আগ পর্যন্ত পেট এমনিতেই ফুলে যায়। ডায়াফ্র্যাগম্যাটিক ব্রিদিংয়ের ফলে মানুষের মধ্যে থাকা দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগ ও একই সঙ্গে হৃৎস্পন্দন হ্রাস পায়।

ওপরে উল্লিখিত কোনো ব্যবস্থা কাজ না করলে কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় এমন খাবার সম্পর্কে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। এমন কিছু খাবারের মধ্যে উচ্চ ফাইবার যুক্ত ফল কিউই, আম ও শুকনো বরই উল্লেখযোগ্য।

প্রাকৃতিক কোষ্ঠকাঠিন্য উপশমকারী খাবার ছাড়াও ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড, বাইস্যাকোডাইল, সিলিয়াম বা পলিথিলিন গ্লাইকল থ্রি থ্রি ফাইভ জিরোর মতো ওষুধ এক গ্লাস পানি বা জুসের সঙ্গে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে উপকার পাওয়া যায়। সূত্র : টিবিএন