এবারও নৌকা প্রতীক চায় শরিকরা
নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপি নির্বাচনে আসছে না, এটা ধরে নিয়েই আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিকেরা এখন ভোটের প্রস্তুতি শুরু করেছে। তবে আসন ভাগাভাগির প্রশ্নে এখনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু না হলেও জোটের শরিকেরা আগের নির্বাচনগুলোর তুলনায় এবার অনেক বেশি অর্থাৎ ১০০টির মতো আসন চাইতে পারে। এবারও আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়েই নির্বাচন পাড়ি দিতে চায় ১৪ দলীয় জোটের শরিকেরা।
ক্ষমতাসীন দলের নেতৃত্বাধীন এই জোটের শরিকেরা আসন ভাগাভাগির সমঝোতায় যে আসনগুলো পাবে, সেগুলোতে তারা নৌকায় ভোট করবে। শরিকেরা নৌকা প্রতীক নিয়ে তাদের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের জয় নিশ্চিত করতে চায়। এর বাইরে নিজস্ব প্রতীকেও কিছু প্রার্থী দেবে শরিক দলগুলো।
নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটগতভাবে ভোট করার কথা জানিয়ে ১৪ দলের শরিকেরা নির্বাচন কমিশনকে চিঠিও দিয়েছে। শনিবার ইসির নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জোটের শরিকদের মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলসহ (জাসদ) ছয়টি দল নির্বাচন কমিশনে (ইসি) চিঠি দিয়ে জানিয়েছে যে তারা জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে। এর অর্থ হচ্ছে, শরিকেরা নিজেদের প্রতীকের বাইরে নৌকা প্রতীকেও ভোট করতে পারবে।
১৪ দলের শরিক আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জেপি) ২০১৮ সালের নির্বাচনে নিজেদের প্রতীক বাইসাইকেলে ভোট করে জয়ী হয়। অন্য শরিকেরা নৌকা ছাড়া নিজস্ব প্রতীকে ভোট করলেও সেগুলোতে জয়ী হতে পারেনি। এবার জেপিও আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটগতভাবে নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট করার কথা জানিয়ে ইসিকে চিঠি দিয়েছে।
১৪ দলের বাইরে জাতীয় পার্টি (জাপা) শেষ পর্যন্ত ভোটে আসবে বলে তারা নিশ্চিত। জাতীয় পার্টির সঙ্গেও আসন সমঝোতা করতে হবে। আরও আছে বিকল্পধারা ও বিভিন্ন ইসলামি দল। এর বাইরে এবার যুক্ত হয়েছে ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিত তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি। বিএনপি থেকে বের হয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে পারেন কেউ কেউ। ফলে এবার সমঝোতার তালিকা বড় হবে।
এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ শরিক ও সমমনাদের জন্য ৭০টি আসন ছাড়ার কথা বিবেচনা করছে। এর মধ্যে জাতীয় পার্টিকে সবচেয়ে বেশি আসন ছাড়তে হতে পারে। তবে বিএনপি থেকে গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের কেউ বেরিয়ে এলে ছাড় দেওয়া আসনের সংখ্যা বাড়তে পারে।
অবশ্য আওয়ামী লীগের অন্য একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দলটি এবার সব মিলিয়ে যত আসন ছাড়ার চিন্তা করছে, তার চেয়ে বেশি আসন প্রত্যাশা করছে ১৪ দলের শরিকেরা। শরিকদের সঙ্গে কথা বলে যে ধারণা পাওয়া গেছে, তাতে তারা অন্তত শখানেক আসনের তালিকা দেবে। তবে আওয়ামী লীগ ১০-১২টি আসনের বেশি ১৪ দলের শরিকদের ছাড়তে রাজি নয় বলে ক্ষমতাসীন দলটির সূত্র জানিয়েছে।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানিয়েছে, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর ১৪ দলের শরিকদের কাছ থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা চাওয়া হবে। প্রত্যাহারের শেষ সময়ে শরিকদের আসন নিশ্চিত করা হবে। শরিকদের আপত্তি থাকলে কিছু আসনে নিজেদের প্রতীকে ভোট করার পরামর্শ দেবে আওয়ামী লীগ।
সব দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত ২০১৮ সালের নির্বাচনে ১৩টি আসনে ১৪ দলের শরিকদের ছাড় দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে শরীফ নূরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাসদ দুটি আসন পেয়েছিল। কিন্তু এখন দলটি ১৪ দলীয় জোটে নেই। গত নির্বাচনে ওয়ার্কার্স পার্টি পাঁচটি আসনে নৌকা পেয়েছিল। এর মধ্যে দুটি আসনে তারা হেরে যায়। হাসানুল হক ইনুর জাসদ তিনটি আসন পেয়ে দুটিতে জয়ী হয়। তরীকত ফেডারেশন ও জেপি একটি করে আসন পেয়ে জয়ী হয়।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে আগামী ৭ জানুয়ারি। নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর।