রাজশাহীতে এক কেজি চিনির উৎপাদন খরচ ৩০০ টাকা

টুইট ডেস্ক : রাজশাহী সুগার মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল বাশার বলেছেন, রাজশাহী সুগার মিল চালাতে যে পরিমান আখ প্রয়োজন তা পাওয়া যায় না। এটিই লোকসানের বড় কারণ। মিল লাভজনক করতে আখ চাষের বিকল্প নেই। একইভাবে চিনির পাশাপাশি বাইপ্রোডাক্ট করা গেলে সুদিন ফিরবে সুগার মিলে। গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাতকারে তিনি এ সব কথা বলেন।

আবুল বাশার বলেন, আগের রেকর্ড তুলে তিনি বলেন, এক সময় আখ মাড়াই হয়েছে বেশি। তখন দুই লাখ টন আখও মাড়াই হয়েছে। তখনও ৮৪ থেকে ৮৫ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। তার কারণ তখন চিনির মূল্য ছিল কম। এই কারণে এতো লোকসান হয়েছে। বর্তমানে এক কেজি চিনির উৎপাদন খরচ ৩০০ টাকা। তবে উৎপাদন খরচ আবার আখ মাড়াইয়ে ওপরে নির্ভর করে। মিল বেশি দিন চললে চিনি উৎপাদনের খরচ কমে যায়। মিলে বেশি আখ মাড়াই করতে পারলে ৩০০ থেকে নেমে ২০০ বা ১৫০ টাকায় নেমে আসতো। আমাদের টার্গেট চিনির উৎপাদন খরচ প্রতিকেজি ১০২ টাকায় রাখা।

তিনি বলেন, মিলের মূল উপদান আখ। আখের উৎপাদন যেহেতু আমাদের কম। চাষিরা আখ উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। যেহেতু অন্যান্য ফসলের দাম বেশি। তাই অন্যান্য ফসলে আবাদের (চাষের) জন্য চাষিরা ঝুঁকেছে। এখানে (রাজশাহী) মৎস্য চাষের জন্য পুকুর, ইটভাটা, নগরায়ন হওয়ার কারণে আখ আবাদযোগ্য জমি কমে যাচ্ছে। মিল চালাতে গেলে যে পরিমাণ আখের প্রয়োজন, সেই পরিমাণ আখ আমরা পাই না। এটিই লোকসান হওয়ার বড় কারণ।

ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, এক মৌসুমে আখ মাড়াইয়ের জন্য যদি মিল রেডি (চালু) করি তাহলে প্রথমে আড়াই থেকে তিন কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। এই মিল একদিন চলুক বা ছয় মাস চালাক। এই বিনিয়োগ করে মিলটা রানিং (চালু) করতে হবে। যেহেতু আমার প্রাথমিক বিনিয়োগ বেশি। কিন্তু মিল আখের অভাবে বেশি দিন চালাতে পারছি না। তার কারণে লোকসানটা বেশি হচ্ছে। একমাস দুইমাস নয়, এই মিলসটা যদি পাঁচ মাসও চালানো হয়, সেই ক্ষেত্রে এই তিন কোটির সঙ্গে মাত্র কয়েক লাখ টাকা বেশি খরচ হবে। অর্থাৎ মিল বেশি দিন চললে লোকসান ততো কম হয়।

যন্ত্রপাতির বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ১৯৬২ সালে এই মিলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দীর্ঘদিনে মিলের যন্ত্রপাতির উৎপাদন ক্ষামতা কমেছে। দিন দিন আরও কমে যাচ্ছে। মিলের কিছু যন্ত্রপাতি আবার নতুন রিপ্লেসমেন্ট (বদল) করা যেত, তাহলে চিনি উৎপাদন বেড়ে যেত। পুরাতন যন্ত্রপাতির কারণে যে পরিমাণ চিনি উৎপাদন হওয়ার কথা আমরা করতে পারি না।

তবে এখন যে পরিমাণ আখ মাড়াই করা হচ্ছে, সেখান থেকে যে পরিমাণ চিনি পাওয়া যাচ্ছে, যন্ত্রপাতি ভালো থাকলে বেশি চিনি পাওয়া যেত। কিন্তু তারপরেও কাঙ্খিত চিনি উৎপাদন হতো না। মিল পাঁচ মাস চলার কথা, কিন্তু চলে ২২ দিন। এই ২২ দিনে যে পরিমাণ চিনি পাওয়ার কথা তার থেকে কম পাচ্ছি মেশিনারি ত্রুটির কারণে।

তিনি বলেন, এবার সরকার আখের দাম বৃদ্ধি করেছে। আমরা আশা করছি এবার আখের চাষ বাড়বে। লক্ষ্যমাত্র ৫ হাজার একর। সাড়ে ৫ হাজার হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এটা হলে আগামী মৌসুমে ভালো পর্যায়ে চলে আসবে আখের চাষ। গত মৌসুমে লোকসান হয়েছে ৬৩ কোটি টাকা। মিল চলেছে ২২ দিন। আরও ২২ দিন চালাতে পারলে মিল নো লোস নো প্রোফিটে চলে যেত। দুই বছর আগে আট হাজার টন চিনি উৎপাদন হয়েছিল। তখন লোকসান ছিল ৮৪ কোটি টাকা। এ বছর চিনি হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৩৫৬ মেট্রিক টন। আর লোকসান হয়েছে ৬৩ কোটি টাকা। চিনির দাম বার্তি। আর ২০ থেকে ২২ দিন মিল চালানো গেলে অনেক লোকসান কমে যেত। একেবারে চলে যেতাম নো লাভ, নো লোসে।

চিনি কল নিয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল বাশার বলেন, কেরির মতো করার একটা প্লান (পরিকল্পনা) ছিল সরকারের। মুলাসেস থেকে স্পিরিট, অ্যালকোহল করতে পারতাম। রাজশাহী আমের এলাকা। তাই এখানে একটা ম্যাংগো জুস কারখানা বা ম্যাংগো পাল্প কারখানা করার বিষয়ে সরকারের কাছে আমাদের প্রস্তাবনা রয়েছে। চিনির পাশাপাশি এসব করলে মিলটা লাভজনক হয়ে উঠবে। এই শ্রমিকদের দিয়েই চালানো যাবে। তবে কিছু শ্রমিক লাগবে সেই সংশ্লিষ্ট কাজে দক্ষ এমন। মিল ২২ দিন আর জুস মিলে ৩ মাস চালাতে পারলে খরচ কমে আসবে। বাই প্রোডাক্ট করা গেলে রাজশাহী সুগার মিলের সুদিন ফিরবে।

শ্রমিকদের বিষয়ে তিনি বলেন, মিল চালুর সময় যারা আসবে তারা শুধু মিল চলাকালীন সময়ের বেতন পাবেন। গত ১৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে নিয়োগ বন্ধ থাকায় সৃষ্টি হয়েছে জনবল সংকট। ১ হাজার ২৪৭টি পদের বিপরীতে শূন্য রয়েছে ৫৪১টি পদ। কর্মরতদের সঙ্গে মৌসুমী শ্রমিকরাও কাজ করে থাকেন।

চিনি কল সূত্রে জানা গেছে, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ২৪ নভেম্বর থেকে ২০২৩-২৪ মৌসুমের আখ মাড়াই শুরু হবে। সেই লক্ষ্যে সবধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। সুগার মিল কর্তৃপক্ষের দাবি-গত বছরের তুলনায় এবার আখ বেশি চাষ হয়েছে। তাই এ বছর বেশি দিন চলবে সুগার মিল।

২০২২-২৩ মৌসুমে ২৬ হাজার ৪৫ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করা হয়। এ থেকে চিনি উৎপাদন হয় ১ হাজার ৩৫৬ মেট্রিক টন। এই চিনি উৎপাদন খরচ হয় ৮৩ কোটি ১ লাখ ২৯ হাজার টাকা। পরে উৎপাদিত চিনি ও চিটা গুড় বিক্রি করে আয় হয় ২০ কোটি ১ লাখ ২৯ হাজার টাকা। ফলে এই মৌসুমেও সুগার মিলের লোকসান হয় ৬৩ কোটি টাকা।

এগুলোর মধ্যে রয়েছে- পশ্চিমে কাশিয়াডাঙ্গা, নওদাপাড়া, মিলস গেট ‘ক’ ও মিলস গেট ‘খ’ জোন। এই জোনগুলোতে আখের উৎপাদন একেবারেই স্বল্প।

অপরদিকে রাজশাহী জেলার পুঠিয়া, নন্দনগাছী, সরদহ, চারঘাট ও আড়ানিতে আখের উৎপাদন তুলনামূলক বেশি। সে ক্ষেত্রে মিলের মোট চাহিদা এ পাঁচটি সাব জোন থেকে পূরণ হয়।