আরও ৪৮ ফিলিস্তিনি নিহত, এই বর্বরতার শেষ কবে?

টুইট ডেস্ক : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ভূখণ্ড গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরতা থামছেই না। সর্বশেষ একদিনে দখলদার দেশটির হামলায় একই পরিবারের ১৫ জনসহ অন্তত ৪৮ হন নিহত হয়েছেন।

এর মধ্যে মধ্যাঞ্চলীয় শহর জাওয়াইদায় ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ১৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৫ জন একই পরিবারের সদস্য। এসব সদস্যর মধ্যে ১১ জন শিশু রয়েছে। খবর আল জাজিরার।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটির খবরে বলা হয়েছে, শনিবার গাজাজুড়ে হামলা চালিয়ে ইসরায়েলি বাহিনী অন্তত ৪৮ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।

এর মধ্যে একই পরিবারের ১৫ জন সদস্য রয়েছে, যারা সেন্ট্রাল আজ-জাওয়াইদায় নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে দুই থেকে ১১ বছর বয়সী ১১ শিশু রয়েছে। তাদের জানাজা হয়েছে।

নিহতদের প্রতিবেশী আবু আহমেদ হাসান বলেন, ‘তারা বিছানায় ঘুমিয়ে ছিলেন, তখন তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র তাদের বাড়িতে আঘাত হানে। সেখানে কোনো ধরনের সামরিক তৎপরতা ছিল না। ওই বাড়ির মালিক একজন পরিচিত ব্যবসায়ী ছিলেন।’

এছাড়া ভূখণ্ডটির বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আরও ৩১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি বর্বরতা থামবে কবে-

গত বছরের অক্টোবর মাসের ৭ তারিখে ইসরায়েলে বড় সামরিক অভিযান চালায় গাজার হামাস সরকার। এর পরপরই গাজায় গণহত্যা শুরু করে ইসরায়েল।

এ আগ্রাসনে ইতোমধ্যে ৪০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। আহতের সংখ্যাও ৯২ হাজার ছাড়িয়েছে।

ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজার অসংখ্য শিশু তাদের হাত অথবা বাহু হারিয়ে পঙ্গুত্ববরণ করছে। পঙ্গুত্ব বরণ করা এসব শিশুকে রোজই ভয়ানক সব পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

দখলদার ইসরায়েলের বর্বর হামলায় অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় দৈনিক ১০ জন শিশু তাদের একটি অথবা দুটি পা হারাচ্ছে বলে লোমহর্ষক তথ্য দিয়েছে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু বিষয়ক সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)। এছাড়াও অসংখ্য শিশু তাদের হাত অথবা বাহু হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করছে। এমন পরিস্থিতিতে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ হামলা বন্ধের আহ্বান জানালেও ইসরায়েল তাদের আহ্বানকে পাত্তা দিচ্ছে না।

উল্টো দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস ও এর আশপাশের এলাকায় বিমান হামলা জোরদার করা হয়েছে। সেখানে এরইমধ্যে নতুন করে আরও প্রায় ৭০ হাজার বাসিন্দাকে জোরপূর্বক এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে নেতানিয়াহু প্রশাসন।

ইরানে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া গুপ্তহত্যার শিকার হওয়ার পর থেকেই এর জেরে উত্তপ্ত ইসরায়েল-লেবানন সীমান্ত। ইসরায়েলি ভূখণ্ড লক্ষ্য করে লেবাননভিত্তিক সশস্ত্রগোষ্ঠী হিজবুল্লাহর একের পর এক রকেট হামলা চালাচ্ছে। এর পাল্টা জবাবও দিচ্ছে আইডিএফ। হামলা-পাল্টা হামলায় উত্তপ্ত গোটা সীমান্ত পরিস্থিতি। পাল্টাপাল্টি রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় গোটা এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।

এমন অবস্থায় হানিয়া হত্যাকাণ্ডের জেরে ইরানের যেকোনো ধরনের হামলা মোকাবিলায় ইসরায়েলকে সাড়ে তিনশ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা দিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এরইমধ্যে, ওই সহায়তার আওতায় তেল আবিবে অত্যাধুনিক এফ টুয়েন্ট টু যুদ্ধবিমানসহ অন্যান্য সমরাস্ত্র সরবরাহ শুরু হয়েছে বলেও জানিয়েছে ওয়াশিংটন। ফলে যুদ্ধের শেষ কবে তা বলা দুস্কর হয়ে পড়েছে।

হামাসের কর্মকর্তা ওসামা হামদান আল জাজিরাকে বলেছেন, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি বিনিময় চুক্তির প্রধান বাধা হিসেবে রয়ে গেছেন। কারণ ইসরায়েলি আলোচকরা কাতারে দুই দিনের যুদ্ধবিরতি আলোচনার পরে ‘সতর্ক আশাবাদ’ ব্যক্ত করেছেন।

যদিও ইসরায়েলে হাজার হাজার সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারী নেতানিয়াহু প্রশাসনকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে নেওয়ার দাবিতে তেল আবিব এবং অন্যান্য শহরের রাস্তায় নেমেছিল।