ভূমিধসে কেরালায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৫১

টুইট ডেস্ক : ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালার পার্বত্য জেলা ওয়েনাড়ের বিভিন্ন স্থানে মঙ্গলবার ভোরে ভারি বৃষ্টিপাতের মধ্যে ধারাবাহিক পাহাড় ধসে জেলাটি এখন মৃত্যুপুরীর রূপ নিয়েছে। ভূমিধসে শিশুসহ নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫১ জনে। আহত হয়েছেন প্রায় ১৮৬ জন।

এছাড়া শতাধিক মানুষ এখনও ভূমিধসের নিচে চাপা পড়ে আছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বেশ কয়েকটি পরিবার জানিয়েছে তাদের প্রিয়জনদের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত কেরালার ওয়ানাড় জেলায় মুষলধারে বৃষ্টিপাতের মধ্যে মঙ্গলবার ভোররাতে বিভিন্ন পাহাড়ের ঢাল ধসে পড়তে শুরু করে। এতে হতাহতদের বেশিরভাগই চা বাগানের শ্রমিক বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

অবিরাম বৃষ্টিপাতের ফলে কেরালার পরিস্থিতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন সড়ক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উদ্ধার প্রচেষ্টায় জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। ওয়ানাড় জেলায় চার ঘণ্টায় তিনটি ভূমিধস হওয়ার আগে রাজ্যটিতে ২৪ ঘণ্টায় ৩৭২ মিলিমিটার (১৪ দশমিক ৬৪ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।

ভারতের আবহাওয়া পরিষেবা ওয়ানাড় ও বেশ কয়েকটি জেলায় আরও দুই দিন বৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়ে আটটি জেলায় সতর্কতা জারি করেছে, এর মধ্যে চারটিতে অরেঞ্জ অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।

ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, ভূমিধসে বেশ কিছু বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে, বহু গাছ উপড়ে পড়ে ধ্বংসযজ্ঞের একটি ধারা তৈরি হয়েছে। অন্তত চারটি গ্রাম অন্যান্য এলাকাগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, এতে বহু মানুষ আটকা পড়েছেন।

মঙ্গলবারের এই দুর্যোগ ২০১৮ সালের পর রাজ্যটিতে হওয়া সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়। ওই বছর ব্যাপক বন্যায় প্রায় ৪০০ লোকের মৃত্যু হয়েছিল।

কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন সাংবাদিকদের বলেন, “এখনও অনেকে মাটির নিচে চাপা পড়ে আছেন। সম্ভাব্য সব শক্তি ও উপায় নিয়ে উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাবো।”

ওই এলাকা থেকে ৩ হাজারেরও বেশি বাসিন্দাদের সরিয়ে ৪৫টি আশ্রয় কেন্দ্রে রাখা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ড্রোন ও উদ্ধারকারী কুকুর ব্যবহার করে সেনা সদস্যসহ শত শত কর্মী জীবিতদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছেন।”

বিজয়নের দপ্তর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর সঙ্গে নিকটবর্তী চুরালমালা শহরকে সংযোগকারী সেতুটি ভেঙে পড়ায় উদ্ধার কাজ ব্যহত হচ্ছে। তাই দ্রুত সেতুটি মেরামত করার জন্য সেনা প্রকৌশলীদের মোতায়েন করা হয়েছে।

বিজয়ন বলেছেন, ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে ভূমিধসের আগেই অনেক বাসিন্দাদের ওই এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল, এতে হতাহতের সংখ্যা কম হয়েছে।

তিনি বলেন, এই অঞ্চলে ২০৪ মিলিমিটার (৮ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল কিন্তু ৪৮ ঘণ্টা সময়কালে ৫৭২ মিলিমিটার (২২ দশমিক ৫ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত হয়েছে।

আগামী পাঁচ দিন রাজ্যজুড়ে আরও বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে জানিয়ে তিনি জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

এ ঘটনায় মঙ্গল ও বুধবার রাজ্যে শোক ঘোষণা করেছে কেরালা সরকার। বিপুল সংখ্যক মানুষের হতাহতের ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধী।