বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন
এম বি আলম : বাজারে দ্রব্যমূল্যের অলৌকিক বৃদ্ধি একটি গুরুতর সমস্যা হিসেবে উঠছে, যেটি জনগণের অর্থনৈতিক অবস্থা ও জীবনযাপনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। দ্রব্যমূল্যের বেড়েছে অস্থিরতা, এর ফলে সাধারিত মানুষের জীবন কঠিন হয়েছে। খাদ্যের দামের বৃদ্ধি সাধারণ মানুষকে দূর্ভোগে ফেলেছে। শ্রমজীবীদের আওয়াজ চিৎকার করছে, তাদের জীবন হয়ে গিয়েছে কঠিন। এই অস্থিরতার সমাধানে সরকারের কার্যক্রম আরও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের দৃঢ় ইচ্ছা ও কার্যকরী পদক্ষেপ প্রয়োজন। অপরদিকে জনগণের কাছে একটি কার্যকরী, নিষ্পক্ষ এবং প্রতিবাদশীল সরকারের আশা রয়েছে, যা সমস্ত নাগরিকের জীবন এবং উন্নতির জন্য কাজ করবে।
বর্তমান সময়ে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ শ্রমিক-মজুর-কামার-কুমার সবাইকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা কী? তাদের প্রথম উত্তর হবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি। খাদ্য মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার। জীবনধারণের জন্য খাদ্য অত্যাবশ্যক, আবার সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য নিরাপদ পুষ্টিমানসম্পন্ন ও সুষম খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন। একজন মানুষ যখন তাঁর প্রয়োজনীয় খাদ্য গ্রহণ করতে পারেন না, তখন তিনি কোনো কাজই ঠিকঠাক করতে পারেন না। নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়েই চলছে। শত চেষ্টা করেও বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সরকার। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এখন একটি আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা শুনলেও মানুষ ততটা ভয় পান না, যতটা এখন দ্রব্যমূল্য নিয়ে পাচ্ছেন। কয়েক মাস ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে চরম বিপাকে পড়েছেন দেশের সাধারণ মানুষ। শ্রমজীবীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। চাল, ডাল, চিনি, তেলসহ প্রায় প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম এখন আকাশচুম্বী। সাধ্যের বাইরে মুরগি, গরু ও খাসির গোশত। পেঁয়াজ, আলু, ডিম, কাঁচা মরিচ—সবকিছুর দামই ঊর্ধ্বমুখী।”
বাজারে দ্রব্যমূল্যের অলৌকিক বৃদ্ধির মাধ্যমে অস্থিরতা তৈরি হলেও এটি সাধারিত মানুষের জীবনকে কঠিন করছে এবং অসম্পূর্ণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কারণে জনগণের অসন্তোষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই অস্থিরতা সমাধানে জনগণের আশা আছে যে, সরকার তাদের অধিকার এবং চাহিদা শোনার মাধ্যমে একটি সুস্থ, শক্তিশালী, এবং সক্ষম অর্থনীতি তৈরি করতে সাহায্য করবে, তাতে সমস্ত নাগরিক উন্নত ও অনুকূল সম্পর্কের মাধ্যমে জীবন যাপন করতে পারে। আশা করা হলো যে, সরকার সঠিক নীতি এবং পদক্ষেপ নেবে, যা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বাজারে উল্লেখযোগ্য স্থিতি তৈরি করতে সাহায্য করবে, এবং এই সমস্যার সমাধানে জনগণের প্রতি উদ্বুদ্ধতা দেখাবে।
আমরা যদি একজন গার্মেন্টস শ্রমিকের উদাহরণ টানি, যাঁর ন্যূনতম মজুরি আট হাজার টাকা, তাহলে প্রশ্ন জাগে, তিনি কীভাবে এই দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে মানিয়ে জীবনধারণ করছেন। এই আট হাজার টাকা মজুরির মধ্যে দুই হাজার টাকা বা এর বেশি ব্যয় হয় ঘরভাড়া বাবদ। বাকি টাকা দিয়ে সন্তান–পরিবারের খাবার খরচ, মা–বাবা থাকলে তাঁদের কাছে টাকা পাঠাতে হয় আর অসুখবিসুখ তো রয়েছেই দরিদ্র মানুষের নিত্যসঙ্গী! ছেলে মেয়েকে লিখাপড়ানো করাতে কে না চাই। কিন্তু সাধ বাধে যখন ভর্তি জন্য ফ্রি-দেওয়ার প্রশ্ন আসে । এই অল্প মজুরি দিয়ে ঠিকমতো ভাত-ডালই যাঁদের কপালে জুটে না, তাঁদের আবার আমরা লিখাপড়া, পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার কথা বলি! পুষ্টিকর খাবার সেটা তো রীতিমতো সোনার হরিণ এসব দরিদ্র মানুষের কাছে। এই পুষ্টিহীনতা নিয়ে আমাদের দেশের একটি বিশাল জনগোষ্ঠী ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অথচ তাদের কর্মক্ষমতা অথবা কর্মদক্ষতা স্বাভাবিকভাবেই কম থাকে।
এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ, উন্নয়নের জোয়ার বইছে চারদিকে। চারিদিকে শুধু উদ্বোধন, দেশ এগিয়ে গেছে, রাষ্ট্রের চেহারা পাল্টে গেছে এটা অস্বীকার করা বোকামী। দলমত জনগন সবাই উন্নয়নের প্রশ্নে আমার সাথে একমত হবেন। তবে কিছুটা লাগাম টানলে রাষ্ট্রের তথা জনগনের মনে উন্নয়ন প্রশ্নে কোনরুপ দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকতো না, এটা সবাই জনগণ বিশ্বাস করে। উন্নয়নের পাশাপাশি যদি মানুষ দুবেলা দুমুঠো খেতে না পারেন, তবে স্বাভাবিক ভাবেই মনে মনে ক্ষোভ জম্ম নেয় । আমি বলছি না, উন্নয়নের প্রয়োজন নেই। কিন্তু যে দেশের মানুষ মৌলিক অধিকার পূরণ করতে হিমশিম খান, সেখানে উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
আমি মনে করি, সরকারের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত দ্রব্যমূল্য কীভাবে হ্রাস করা যায়, সেদিকে। মানুষের খাদ্যনিরাপত্তার দিকে অধিক মনোযোগ দিন। মূল্য অপরিস্থিতি ও অব্যাহত হোক, সরকারের দক্ষ প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে খাদ্য মন্ত্রণালয়কে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জড়ানো প্রয়োজন। অস্থিরতা দূর করতে অসুস্থ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট দমন করা প্রয়োজন। আমাদের প্রত্যাশা, সরকার অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের লাগাম টেনে ধরতে সক্ষম হবে এবং আদালতে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আমাদের প্রয়োজন জনগনের জন্য সরকার, জনগনের সরকার। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করুন!