জাবিতে রাতভর সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি থমথমে

ছবি: সংগৃহীত

টুইট ডেস্ক: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর রাতভর সংঘর্ষের পর এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকালে পরিস্থিতি শান্ত হয় বলে জানা যায়।

জানা যায়, সোমবার (১৫ জুলাই) রাত ১২টার দিকে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের হামলার ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগের দেড়শতাধিক নেতাকর্মী বহিরাগতদের সঙ্গে নিয়ে হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও তা আরও ঘোলাটে আকার ধারণ করে। ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগকে ধাওয়া দিয়ে পিছু হটালেও পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এ সময় পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেল ও গুলিতে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জাহাঙ্গীরনগরের ভয়াল পরিস্থিতির বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সুত্র জানায়, রাত ১২টা ৩৮ মিনিটে মেসেঞ্জারের মাধ্যমে জানান, সাংবাদিকদের ওপর পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে বহিরাগতরা। আতঙ্কে তারা পুকুরে বসে ছিলেন। হামলাকারীরা সাংবাদিকদেরও ছাড় দেয়নি। কেউ কেউ জঙ্গলের ভেতরে লুকিয়ে পড়েন। অনেকেই আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে পড়েন।

প্রায় একইসময়ে জেইউ ইনসাইডার নামের একটি ফেসবুক পেজের পোস্টে বলা হয়, ‘এমন ভয়াল কালোরাত জাহাঙ্গীরনগরের জীবনে হয়তো আর আসেনি।’ ওই পেজ থেকে ক্যাম্পাসের সংঘর্ষের চিত্র লাইভের মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছিল।

পরে রাত সোয়া ৩টার দিকে ইত্তেফাকের প্রতিনিধি আরিফুজ্জামান উজ্জল জানান, পুলিশের উপস্থিতিতেই হামলা করেছিল ছাত্রলীগ, পরে দেড় হাজারের মতো শিক্ষার্থী এসে ছাত্রলীগকে ধাওয়া দিয়ে ক্যাম্পাস ছাড়া করে। অন্যদিকে পুলিশের ছোঁড়া কাঁদানে গ্যাস ও গুলিতে বণিক বার্তার মেহেদী মামুন, দৈনিক বাংলার আব্দুর রহমান খান সার্জিল ও বাংলাদেশ টুডে’র জোবায়ের আহমেদ আহত হন। ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা কয়েকজন পুলিশ সদস্যকেও মারধর করেন। এরপর পুলিশ জলকামান নিয়ে আসে এবং অন্তত অর্ধশত রাউন্ড টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।

বহিরাগতসহ ছাত্রলীগের দেড় শতাধিক নেতা-কর্মী হামলায় অংশ নেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। ছবি : সংগৃহীত

আরোও জানা যায়, আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করতে ছাত্রলীগ বাইরে থেকে একশ জন শুটার নিয়ে এসেছিল। তাদের পরনে ছিল হেলমেট ও কালো টি-শার্ট এবং হাতে পিস্তলসহ অন্যান্য অস্ত্র ছিল। তারা সাভার ও আশুলিয়ার লোকাল গ্যাং হতে পারে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের সামনে রেখে হামলা চালায়। হামলা থেকে বাঁচতে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের ভেতরে আশ্রয় নেন। তাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোঁড়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। প্রথমে আক্রমণের শিকার হলেও পরে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ছাত্রলীগকে ধাওয়া দেন। হল থেকে হাজারো শিক্ষার্থী বের হয়ে এলে ছাত্রলীগ পিছু হটে। ওই সময় পুলিশের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বেঁধে গেলে পুলিশ গুলি চালায়।

এর আগে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী মাহফুজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের সামনে আমাদের মিছিলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এতে নেতৃত্ব দেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেল। এর প্রতিবাদে ও বিচার দাবিতে আমরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করছিলাম। পরে রাত ১২টার দিকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা দ্বিতীয় দফায় লাঠি হাতে আমাদের ওপর হামলা চালায় এবং আমাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।’

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলকে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।

সোমবার সন্ধ্যার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকায় তাঁদের ওপর হামলা হয়। এতে অর্ধশতাধিক ছাত্রছাত্রী আহত হন। রাত সাড়ে আটটার দিকে এ ঘটনার বিচার চেয়ে ও অবৈধ শিক্ষার্থীদের হল থেকে বিতাড়িত করতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

রাত সোয়া ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা উপাচার্যের বাসভবনের প্রধান ফটক ছেড়ে রাস্তায় চলে যান। পরে রাত পৌনে দুইটার দিকে ফটক ভেঙে বাসভবনের ভেতরে প্রবেশ করেন তারা। এ সময় বেশ কয়েকটি পেট্রলবোমা ছুড়ে বাসভবনের প্রধান ফটকের লাইটসহ বিভিন্ন লাইট ভাঙচুর করেন তারা। এরপর আন্দোলনকারীদের মারধর করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। উপাচার্য বাসভবনেই ছিলেন বলে জানা গেছে।

ওই সময় এক ফেসবুক পোস্টে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোতাহের হোসেন লিখেছেন, ‘ক্যাম্পাসে বহিরাগতরা ঢুকেছে। ছাত্রছাত্রীরা ভয়ে ভিসি মহোদয়ের বাংলোতে আশ্রয় নিয়েছে। প্রশাসনকে নিরাপত্তা বিধানের অনুরোধ করছি। যা কিছুই হোক, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে।’

ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) আবদুল্লাহ হিল কাফী বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি।’ তবে সার্বিক পরিস্থিতির ব্যাপারে এখনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কারোর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।