পিএসসির প্রশ্নফাঁস ইস্যুতে তোলপাড়: আবেদ ক্যাডার’দের রক্ষার চেষ্টা

টুইট ডেস্ক: বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) প্রশ্নফাঁস ইস্যুতে সারা দেশে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। সাংবিধানিক একটি প্রতিষ্ঠানের এমন সংবেদনশীল পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস নিয়ে খোদ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে, যাদের মধ্যে সৈয়দ আবেদ আলীকে নিয়ে বেশি আলোচনা ও সমালোচনা হচ্ছে।

জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে কেউ বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে চাকরি পেয়েছে, এমন প্রমাণিত হলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গ্রেপ্তার আবেদ আলীর ফাঁস করা প্রশ্নে যারা বিসিএস ক্যাডার ও নন-ক্যাডার হয়েছেন, তাদেরকে অনেকেই ‘আবেদ ক্যাডার’ হিসেবে সম্বোধন করছেন। এই আবেদ ক্যাডাররা এখন আবেদ আলীকে রক্ষা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পাস করে চাকরিরত বিসিএস ক্যাডাররা আবেদ আলী রক্ষা কমিটির মতো কাজ করছে। কারণ আবেদ আলীকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করলে, কারা কারা প্রশ্নফাঁসে উত্তীর্ণ হয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন, তাদের নাম বলে দিতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।

বিসিএসের সব সেক্টরে আবেদ আলীর ক্যাডার রয়েছে। তারা বিভিন্নভাবে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আবেদ আলীর ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এতে অনেকে বিব্রত বোধ করছেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানায়, আবেদ আলীর প্রশ্নফাঁসে যারা প্রশাসনে ঢুকেছে তারা দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় লিপ্ত। তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার কাজ চলছে।

গত ৮ জুলাই রেলওয়ের একটি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ১৭ জনের মধ্যে পিএসসির কর্মকর্তা-কর্মচারী ছয়জন। এর মধ্যে পাঁচজন এখনও কর্মরত। আরেকজনকে ১০ বছর আগে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল।

পিএসসির অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছেন উপপরিচালক মো. আবু জাফর ও জাহাঙ্গীর আলম। আরও আছেন সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর কবির, কর্মচারী (ডেসপাচ রাইডার) মো. খলিলুর রহমান ও অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলাম। এছাড়া রয়েছেন পিএসসির সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী।

পিএসসির অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গতকাল ৯ জুলাই সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সর্বশেষ রেলের প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গ্রেপ্তার পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে তদন্ত করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) চিঠি দিয়েছে পিএসসি।

সৈয়দ আবেদ আলীর সঙ্গে প্রশ্নফাঁসে জড়িত এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীকে ১০ কোটি টাকার চেকসহ আটক করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রশ্নপত্র ফাঁসের এই চক্রের আরও আটজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। হাইপ্রোফাইল কয়েকজন প্রশ্নফাঁসকারীর নামও জানা গেছে। তাদের মধ্যে মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তা আছেন। আবার অফিস সহায়ক ও গাড়িচালকও আছেন। সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে।

সরকারি চাকরির বিধিবিধান বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া বলেন, পিএসসির ভেতরেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের একটি চক্র কাজ করছে। এর মধ্যে কেউ ধরা পড়েছেন, কেউ এখনও আড়ালে রয়ে গেছেন। বিভিন্ন সময়ে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সাংবিধানিক সংস্থা পিএসসি কেন ফৌজদারি মামলা করেনি, সে প্রশ্ন থেকে যায়।

এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে সিআইডি এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।