প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের আরও আটজন শনাক্ত: তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে

এম বি আলম: বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ক্যাডার, নন-ক্যাডার পরীক্ষাসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশনের (বিপিএসসি) সৈয়দ আবেদ আলীর বিরুদ্ধে। তার নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে একটি বড় প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্র, যার বিস্তার রাজধানীসহ সারা দেশে রয়েছে। এই চক্রের মাধ্যমে মেডিক্যাল ও নার্সিং পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও ফাঁস হয়েছে।

ফাঁস হয়েছে মেডিক্যাল ও নার্সিংয়ের প্রশ্নপত্রও

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মঙ্গলবার এক চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীকে ১০ কোটি টাকার চেকসহ আটক করেছে, যিনি সৈয়দ আবেদ আলীর সাথে জড়িত ছিলেন। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের আরও আটজনকে শনাক্ত করা হয়েছে এবং তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

সৈয়দ আবেদ আলী নগদ লেনদেন ও চাকরি প্রার্থী সংগ্রহের কাজে জড়িত ছিলেন। পিএসসির সাবেক মেম্বার মাহফুজুর রহমান ছিলেন এই চক্রের মূল পৃষ্ঠপোষক। পিএসসির কোনো নিয়োগ পরীক্ষা এলেই এই চক্রের সদস্যরা প্রশ্নপত্র ফাঁস করে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নিতেন। গত ৫ জুলাই অনুষ্ঠিত রেলওয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও তারা ফাঁস করেন। চক্রের সদস্যরা পরীক্ষার আগের রাতে শিক্ষার্থীদের বাসায় রেখে প্রশ্নপত্র ও তার উত্তর দিয়ে দেন।

তদন্তে এখন পর্যন্ত আরও অনেকের নাম সামনে এসেছে। উচ্চপ্রফাইল কিছু নামও পাওয়া গেছে, যা যাচাই-বাছাই চলছে। সিআইডি জানিয়েছে, জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। একই সঙ্গে সৈয়দ আবেদ আলীর হাত ধরে যারা বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন, তাদের তালিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে।

২০১০ সালে মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে আবেদ আলীর সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় এবং তাকে গ্রেফতারও করা হয়। সেই সময় তিনি স্বীকারও করেছিলেন এবং প্রশ্নফাঁসে কারা জড়িত, সেই তথ্য দেন। পরবর্তীতে তাকে ও তার সাথে জড়িত কয়েকজনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। ২০১১ সালে শেরে বাংলা নগর থানায় আবেদ আলীসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়, যা এখনও বিচারাধীন রয়েছে।

চাকরিচ্যুত হওয়ার পর আবেদ আলী পুরাদমে প্রশ্নফাঁসের কাজটি শুরু করেন এবং কয়েক শত কোটি টাকার মালিক হয়ে যান। বিজিপ্রেসের যারা টাইপ করতো, তারাও এই চক্রের সাথে জড়িত ছিল। তারা প্রশ্নগুলো মুখস্থ করে ফেলতো এবং বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে পাঠাতো।

আবেদ আলীর ফাঁস হওয়া প্রশ্নে যারা বিসিএস ক্যাডার ও নন-ক্যাডার হয়েছেন, তাদেরকে অনেকেই ‘আবেদ ক্যাডার’ হিসেবে ডাকছেন। এই আবেদ ক্যাডাররা আবেদ আলীকে রক্ষা করতে মরিয়া। তারা আবেদ আলী রক্ষা কমিটির মতো কাজ করছে, এমন তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সাথে আবেদ আলীর ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে, যা তাদের জন্য বিব্রতকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পিএসসির মাধ্যমে মেধাসম্পন্ন অফিসার চাকরিতে প্রবেশ করে। মেধাবিরা উত্তীর্ণ হয়ে প্রশাসনে যাবে। কিন্তু ফাঁস হওয়া প্রশ্নে কেউ ডাক্তার হলে, সে কি ধরনের ডাক্তার হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রশাসনে গেলে ভালো প্রশাসক হবে না। যে শিক্ষকতায় গেছে, সে ভালো শিক্ষক হবে না।

দুই অপরাধ বিশেষজ্ঞের মতে, স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের মূলে থাকা মাহফুজুর রহমানকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। কত হাজার নিয়োগ পেয়েছে, সেটা যাচাই করে দুর্নীতিবাজদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে তালিকা করে প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ে দেওয়া হবে বলে একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।