ইরানে দ্বিতীয় দফার ভোটে কে হচ্ছেন প্রেসিডেন্ট?

টুইট ডেস্ক : প্রচারণা শেষ হয়ে গেছে। শেষ বিতর্কও। এখন যেটা বাকি তা হলো ভোট। আজ শুক্রবার (৫ জুলাই) ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয় দফায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

এই ভোটের মাধ্যমেই নির্ধারণ হবে ইরানের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট। প্রশ্ন হলো- আগামী পাঁচ বছর ইরান শাসনের সেই বিশাল দায়িত্ব কে পেতে যাচ্ছেন? সঠিক উত্তর জানার জন্য আরও কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে।

চলতি বছরের মে মাসে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান সাবেক প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। তার মৃত্যুর পর ইরানে আগাম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘোষণা করা হয়। প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে নাম লেখান বেশ কয়েকজন প্রার্থী। তার মধ্যে ছয়জনকে অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে একেবারেই শেষ মুহূর্তে এসে সরে দাঁড়ান দুইজন।

গত শুক্রবার (২৮ জুন) অনুষ্ঠিত হয় প্রথম ধাপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তবে নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল অনেক কম। ৬ কোটি ১০ লাখ ভোটারের মধ্যে মাত্র ৪০ শতাংশ ভোট দেন।

আগেই যেমনটা অনুমান করা হয়েছিল, নির্বাচনে ঠিক তেমনটাই ঘটে। চার প্রার্থীর কেউই ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পাননি। এর ফলে সংবিধান অনুযায়ী ভোট গড়ায় দ্বিতীয় দফায়।

শনিবার (২৯ জুন) ইরানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ৫ জুলাই অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দফার ভোট হবে। এই দফায় লড়বেন মধ্যপন্থী রাজনীতিক মাসুদ পেজেশকিয়ান ও কট্টরপন্থী রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত সাঈদ জলিলি। যিনি বেশি ভোট পাবেন, তিনিই হবেন ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট।

ইরানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে- প্রথম দফার ভোটে পেজেশকিয়ান ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট নিয়ে শীর্ষে ছিলেন। অন্যদিকে জলিলি পান ৪০ শতাংশ। তেহরানের রক্ষণশীল সাবেক মেয়র মোহাম্মদ বাগের গালিবাফ ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় হন।

তবে এর মানে পেজেশিকিয়ানের এগিয়ে থাকা নয়। কারণ দ্বিতীয় দফার ভোটে বাঘের গালিবাফ ও অন্য রক্ষণশীল প্রার্থীরা সাঈদ জলিলিকে সমর্থন করছেন। পেজেশকিয়ানের সম্ভাবনা নির্ভর করছে ভোটার উপস্থিতির ওপর। মধ্যপন্থী ও সংস্কারবাদী ইরানিরা যদি ভোট দিতে রাজি হয়, তাহলেই জিততে পারেন পেজেশকিয়ান।

বুধবার (৩ জুলাই) তেহরানের গ্র্যান্ড মোসাল্লা মসজিদে সর্বশেষ প্রচার চালান সাইদ জলিলি। প্রচারের সময় জালিলির হাজারো সমর্থক ‘ইরানের সবাই বলছে জলিলি’ স্লোগান দেন।

জলিলি তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে জানান, তিনি নির্বাচনে জিতলে দেশের সক্ষমতা বাড়বে এবং উন্নতি করবে। তার পক্ষ থেকে প্রয়াত রক্ষণশীল নেতা রাইসির পোস্টার দেয়ালে দেয়ালে সাঁটানো হয়েছে। তাতে লেখা, সুযোগের বিশ্বে ইরান সামনে এগিয়ে যাবে।

অন্যদিকে তেহরানের এক স্টেডিয়ামে সর্বশেষ জনসভা করেন পেজেশকিয়ান। তিনি ঐক্য ও সংহতির ডাক দেন। তার সমর্থকেরা দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট খাতামির নামে স্লোগান দেন। সাবেক সংস্কারপন্থী মোহাম্মদ খাতামি এবারের নির্বাচনে পেজেশকিয়ানকে সমর্থন দিয়েছেন।

ইরানের দ্বিতীয় দফা ভোটের আগে ভোটারদের মধ্যে বিভক্তি দেখা গেছে। দেশটির রক্ষণশীল ভোটাররা জালিলিকে সমর্থন দিচ্ছেন। মরিয়ম নাউরি নামের ৪০ বছর বয়সী এক নারী বলেন, দেশের নিরাপত্তার জন্য জলিলিই সবচেয়ে ভালো হবেন। নাম প্রকাশ না করে ৩৯ বছর বয়সী আরেক নারী বলেন, জলিলি সৎ ব্যক্তি। তিনি রাইসির পথ অনুসরণ করবেন।

জলিলি মূলত কট্টর পশ্চিমাবিরোধী হিসেবে পরিচিত। তিনি ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সঙ্গে ইরানের পারমাণবিক চুক্তির বিরোধী ছিলেন। অন্যদিকে পেজেশকিয়ান ইসরাইল ছাড়া পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে গঠনমূলক সম্পর্ক গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাকে দেশটির মধ্যপন্থী নেতা হাসান রুহানিও সমর্থন দিয়েছেন।