বিরোধীদের বর্জন ও কারফিউয়ের মধ্যে মাদাগাস্কারে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন
বিশ্ব ডেস্ক : বিরোধীদের বিক্ষোভ ও ভোট বর্জনের মধ্যে পূর্ব আফ্রিকার দেশ মাদাগাস্কারে আজ বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হচ্ছে। এ নির্বাচন ঘিরে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে দেশটিতে রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করা হয়েছে। স্থানীয় সময় আজ সকাল ৬টায় শুরু হয়েছে ভোট গ্রহণ, চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে মাদাগাস্কারে। ছয় সপ্তাহ ধরে রাজপথে আন্দোলন করছেন বিরোধী নেতাকর্মীরা। তাঁদের দাবি, প্রেসিডেন্ট আন্দ্রে রাজোয়েলিনাকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে। বিক্ষোভ করতে গিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন।
রাজধানী আন্তানানারিভোর পুলিশ সদস্য অ্যাঞ্জেলো রাভেলোনারিভো বলেন, বেশ কয়েকটি জায়গায় সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ভোটকেন্দ্রে আগুন দেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে আরও অবনতি না হয়, সে জন্য রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করা হয়েছে।
আন্দ্রে রাজোয়েলিনা ‘প্রাতিষ্ঠানিক অভ্যুত্থান’ ঘটানোর চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ রয়েছে বিদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে। বিরোধীরা বলছেন, ২০১৪ সালে রাজোয়েলিনা ফ্রান্সের নাগরিকত্ব নিয়েছেন। এ জন্য নিজ দেশে নির্বাচন করার যোগ্যতা হারিয়েছেন তিনি।
মাদাগাস্কারে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আন্দ্রে রাজোয়েলিনাসহ ১২ জন প্রার্থী হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১০ জনই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়ে তাঁরা ভোটারদের প্রতি নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন।
বিরোধীদের লাগাতার বিক্ষোভ কর্মসূচিতে দমন-পীড়ন চালিয়েছে মাদাগাস্কারের পুলিশ। এর প্রতিবাদে বিরোধীরা ফুলকপি হাতে মিছিল করেছেন। মাদাগাস্কারে পুলিশি নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে কট্টর ডানপন্থী মার্ক রাভালোমানানার মতো বিরোধী রাজনীতিকেরা ফুলকপি ব্যবহার করছেন।
এবারের নির্বাচনে প্রার্থী রোনাল্ড রাতসিরাকা। রাজোয়েলিনার কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত তিনি। রাজোয়েলিনাকে ‘প্রতারক’ বলে অভিহিত করেছেন তিনি।
রাজধানী আন্তানানারিভোয় রেডক্রসের এক কর্মী বিবিসিকে বলেন, ‘পরিস্থিতি দিন দিন খুবই খারাপ হচ্ছে। সহিংসতায় আহতের সংখ্যা বাড়ছে। অনেক মানুষকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিচ্ছি আমরা।’
বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশগুলোর একটি মাদাগাস্কার। ২০২২ সালেও দেশটির ৭৫ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে ছিল। এই হিসাব বিশ্বব্যাংকের। তবে দেশটির খনিগুলোয় কোবাল্ট, সোনা, নিকেল, ইউরেনিয়ামসহ বিভিন্ন খনিজের ব্যাপক মজুত আছে। এরপরও দারিদ্র্যের সঙ্গে দশকের পর দশক ধরে লড়তে হচ্ছে দেশটিকে।
মাদাগাস্কারের জনসংখ্যা প্রায় ৩ কোটি। এর মধ্যে ১ কোটি ১০ লাখ নিবন্ধিত ভোটার।
গত সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগ করেন আন্দ্রে রাজোয়েলিনা। উদ্দেশ্য নির্বাচনে জিতে আবারও ক্ষমতায় যাওয়া। জয়ের বিষয়ে তিনি আত্মপ্রত্যয়ী। বিরোধীদের সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রাজোয়েলিনা।
আন্দ্রে রাজোয়েলিনার মতে, নির্বাচনপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করা ও তাঁর সরকারকে উৎখাত করা-এই দুই উদ্দেশ্য পূরণে বিরোধীরা রাজপথে আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, দেশজুড়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চান বিরোধীরা।
২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট হন রাজোয়েলিনা। তখন আফ্রিকার সবচেয়ে কম বয়সী রাষ্ট্রপ্রধানের তকমা পান তিনি। ২০১৩ সালের নির্বাচনে প্রার্থী হননি রাজোয়েলিনা। তবে ২০১৮ সালের নির্বাচনে জিতে আবারও রাষ্ট্রপ্রধানের পদে ফেরেন তিনি।